আমি যেভাবে কোরেন্টাইনের মাঝে নিজেকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখছি

আমি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ এর সপ্তক শ্রেণীর ছাত্রদিনটিবছিল মার্চের ১৬ তারিখ আগামীকাল মুজিববর্ষতাই কিছুটা রিল্যাক্স ছিলামকিন্তু বাসায় এসে আম্মু ফোন করে বলল শুধু কাল নয়, ১৫ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষিত হয়েছেআমার বাবা- মা দু’জনেই চাকরী করেন৷ স্কুল থেকে একা একাল আসতে হয় ১৫ দিন ছুটি প্রথমে ভালো লাগলতখনো ভাবিনি বাসার বাইরে না গিয়ে সময় কীভাবে কাটবেকিছুদিন পর আমার বাবা-মা দু’জনেরই অফিস ছুটি দিলএইবার আমার দিনকাল খারাপ কাটতে লাগল৷ শুধু যথাসম্ভব বেশী সময় ধরে পড়াশোনা করার জন্য বকাঝকা করত৷ এভাবে চলতে চলতে একদিন শরীরে খুব চুলকানি লাগছিলপরদিন আব্বু দেখতে পেল আমার চিকেন পক্স হয়েছেসাধারণ জ্বর হলে খুব চিন্তার ব্যাপার হতোকেননা এই রোগটা যখন হয়েছে, তখন চারিদিকে করোনার আশঙ্কাকিন্তু চিকেন পক্স যেহেতু সারা জীবনে একবার হয়, তাই আমার বাবা-মা বেশী ভয় পেলেন না৩-৪ দিন এই রোগে ভুগে আমাকে কষ্ট করতে হলোকিন্তু ওষুধ খেয়ে আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলামএইবার আমার ছুটি কাটাতে বিতৃষ্ণা শুরু হলোসারাদিন বাসায় পড়াশোনা ও টিভি – মোবাইল নিয়ে থাকতে থাকতে আমার একঘেয়েমি লাগা শুরু করলো আগে শুক্রবার যে জুমার নামায পড়তে যেতাম, চট্টগ্রামে ভাইরাস আসার পর তাও বন্ধ হয়ে গেললকডাউন ও দিনের পর দিন বেড়ে যেতে লাগলোঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে পড়তে বসতাম এরপর দুপুরে গোসল করে  ভাত খেয়ে পড়তে বসতামবিকেলে পড়া থেকে উঠে আত্র আধঘন্টা টিভি দেখতে পারতামসন্ধ্যায় আবার পড়তে বসতে হতোএভাবে একঘেয়ে দিনকাল কাটাতে কাটাতে একমাস কেটে গেলরমজান মাস শুরু হল৷ এই পুরো লকডাউনে মনে হয় এই সময়টা আমার সবচেয়ে ভালো কেটেছে৷ রমজান মাসের ছুটিতে আমার বড় ভাই কলেজ থেকে বাসায় এলোরমজানে আমার রাত জাগার অভ্যাস রয়েছেকিছুক্ষণ পর সেহরি খাব বলে সারারাত টিভি দেখতামএসময় পড়াশোনার চাপ ও কিছুটা কম থাকে৷ নামাজরোজা ও ইফতার-সেহরী তৈরী করতে আমার বাবা-মা ব্যস্ত হয়ে যেতেন এবং ক্লান্ত হয়ে পড়তেনএই মাস থেকে আমি অনলাইনে পড়ালেখা শুরু করিআমি আমার সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলামঅনলাইনে আমি অনেক কিছু সম্পর্কে নতুন করে জানতে পারছি৷ এই লকডাউনে সবার মতো আমারো একদমই ভালো লাগে নাআমার বাবা-মা চাকরিতে এখনো ফেরত যাননিঈদ উল ফিতরের পর আবার আগের মতো বোরিং দিনকাল কাটাতে হচ্ছেআজ সেপ্টেম্বর মাস শেষ হয়ে যাচ্ছেকিন্তু তবুও আমি স্থিতিশীল রয়েছি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন এই লকডাউন উঠে যায়৷ বাংলাদেশ থেকে যেন প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও আশঙ্কা সরে যায়তাই আজ ও ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছি আমার বিশ্বাস ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়৷ আপাতত আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি৷ ইংরেজী শেখার উন্নতির জন্য ডিকশনারির সাহায্যে ইংরেজি বই পড়ছি৷ ইংরেজী মুভি দেখছি৷ ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে কম্পিউটারের কাজ শিখছি৷ আর বিভিন্ন অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছি৷ এভাবে নিজেকে ব্যস্ত রেখে আমি কোয়ারেন্টাইনে দিন পার করছি একদিন আমি  নিশ্চয়ই নিরাপদভাবে বাসায় বের হব, স্কুলে যাবস্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসববাংলাদেশ করোনামুক্ত হোক, ইনশাল্লাহ

Arif Hossain

School & College Category

GB023

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *