মানসিক স্বাস্থ্য
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, কহেন গুণীজন
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন কজন?
জীবন চাকার গতি থাকে কি সর্বদা সমান?
মানসিক স্বাস্থ্যের জ্ঞান লাভে তাই হই ধাবমান ।
বিশেষজ্ঞ কর্মশালায় উপসর্গগুলি হবে নিরাময়,
অনিয়ম অজ্ঞতায় না হয় যেন এক জীবনের ক্ষয়।
যুক্তিবিদ্যার ভাষায় কেবল মানুষকে বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। একমাত্র মানুষই চিন্তা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। চিন্তা ও আবেগ-এই দুই এর সমন্বয় হলো মানসিক স্বাস্থ্য। আর তাই একমাত্র মানুষকেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হয়।
যখন একজন মানুষের চিন্তা, আবেগ আর আচরণ সুষম আর স্বাভাবিক থাকে, তখন ধরে নেওয়া যায় সে মানসিকভাবে স্বাস্থ্যবান। একজন মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ স্ট্রেস ম্যানেজ, ইন্টারপার্সোনাল রিলেশনশিপ ম্যানেজ, ডিসিশন মেকিং, এট্রিবিউট, এটিটিউড এবং এক্টিভিটিস গুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করে থাকে। তবে কেউ যদি এই কার্যক্রমগুলো স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে ধরে নিতে হবে পরিবেশ-পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ, সরাসরি এটিও বলা যাবে না।
মানসিক অসুস্থতা এমন একটি ব্যাপার যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে । এই পরিণতিগুলো হতে পারে- ডিপ্রেশন, এংজাইটি, বিভিন্ন ধরনের ডিজঅর্ডার ও সবশেষে আত্মহত্যা। এটি কোনো ভাইরাসবাহিত রোগ নয়। একজন মানুষ বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে।
১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘স্বাস্থ্য’ এর- সংজ্ঞা দিয়েছিল, ‘কেবল নিরোগ থাকাটাই স্বাস্থ্য নয়; বরং শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নামই স্বাস্থ্য’, যা আজও অমলিন। অথচ প্রতিনিয়ত এই সংজ্ঞার খণ্ডিত ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। কখনো সচেতনভাবে, আবার কখনো অসচেতনতায়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ‘স্বাস্থ্য’ শব্দটি সীমাবদ্ধ ছিল ‘শারীরিক’ অংশটুকুর মধ্যে। তবে আশার কথা হলো, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ বিষয়টি ধীরলয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল আঙিনায় প্রবেশ করছে।
একজন মানুষ বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে। প্রাথমিকভাবে মানসিক অসুস্থতা গড়ে ওঠে নিজের মস্তিষ্ক ও মনের বৈষম্যতায়। একে একে সমাজ, পরিবার, আর্থিক সংকট, দৈনন্দিন জীবনের সব তুচ্ছ ঝামেলা থেকে মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
পৃথিবী জুড়ে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে দরিদ্র কৃষক কিংবা বিত্তবান ব্যবসায়ী, সকলেরই মানসিক চাপ রয়েছে যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিঘ্ন ঘটায়।
মানসিক স্বাস্থ্যে কেন বিঘ্ন ঘটে?
1)পারিবারিক কলহ
2)শিক্ষা জীবনে পিছিয়ে পড়া
3)সামাজিক দ্বন্দ
4)অর্থ সংকট
5)রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
6)মানসিক অসমতা
7)শারীরিক অবনতি
অবস্তুগত ভাবে আরো ভিন্ন ভিন্ন কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যসংকট নিয়ে জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (১৭ জুন,২০২২) জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, “লাখ লাখ শিশু ও যুবকসহ বিশ্বজুড়ে প্রায় একশ’ কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যসংকটের মধ্যে রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই চিকিৎসার আওতার বাইরে।”
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন একটি অত্যাবশকীয় বিষয়। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হই। এর মধ্যে কোনো ঘটনা আমাদের মনে সুখানুভূতি তৈরি করে, কোনো ঘটনা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। আবার এমন কিছু ঘটনাও ঘটে যা আমাদের মনে বিষাদ, রাগ-ক্ষোভ কিংবা দুঃখের কালো মেঘ নিয়ে আসে। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হলে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হবে, দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব হবে।
মানসিক সমস্যা ও অসুস্থতা এক নয় বরং মানসিক স্বাস্থ্য যখন খারাপ হয় মানসিক সমস্যাগুলি দৃশ্যমান হয়। সময়মত এর চিকিৎসা হলে পুনরায় মানসিক সুস্থতা অর্জন করা যায়।
বাংলাদেশে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্যে সুযোগ সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম। প্রতি তিন লাখ মানসিক রোগীর বিপরীতে হাজারেরও কম চিকিৎসক নিয়োজিত আছেন। সেই সাথে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্ক সচেতনতার অভাব।
তবে আমরা কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্ক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি?
1)মানসিক রোগকে গুরুত্ব দেওয়া এবং রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা
2)মানসিক রোগী যেন নির্দ্বিধায় তার কথাগুলো শেয়ার করতে পারে এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
3)মানসিক রোগী নয় বরং রোগ নিয়ে কথা বলতে হবে
4)রোগীকে তার রোগের নাম দিয়ে ‘লেবেলিং’ না করা, অর্থাৎ রোগীকে রোগের নাম ধরে না ডাকা
5)নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়া
6)মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সুরুচিসম্পন্ন পোস্টার ও প্রতিবেদন তৈরি,লেখালেখি করা
7)স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা, চিকিৎসা 8)সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া
9)ধর্মীয় সংরক্ষণশীলতার মধ্যে আটকে না থেকে বরং ধর্মীয়ভাবে সচেতন হয়ে একজন মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সেবা মানে শুধু মানসিক ব্যাধি এবং মানসিক চাপের চিকিৎসা নয়। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা মানুষকে স্থিতিস্থাপকতা অর্জন করতে এবং জীবনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। নিজের সক্ষমতা আর দুর্বলতা বুঝতে পারা এবং সে অনুযায়ী মনের যত্ন নেওয়া, দৈনন্দিন চাপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে উৎপাদনশীল থাকাই মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষা। যখন একজন মানুষের চিন্তা, আবেগ আর আচরণ সুষম আর স্বাভাবিক থাকে, তখন ধরে নেওয়া যায় সে মানসিকভাবে স্বাস্থ্যবান।
#Volunteerwriteup2022
#worldmentalhealthmonth2022
Name: Rakibul Hasan Sanjer
Department: Printing and Publication Studies
Chapter Name: DU
Designation: Associate Communication Coordinator