খুব হাসিখুশি, প্রাণবন্ত মানুষটা হঠাৎ করে কেমন যেন চুপচাপ, মলিন হয়ে গিয়েছে। আগের মতো কারো সাথে কথা বলে না, মানুষের সাথে মিশতে চেয়েও পারছে না। তার চোখে মুখে কেমন যেন অস্বস্তি এবং হতাশার ছাপ। মনের মাঝে তার অসংখ্য চাপা কষ্ট কিন্তু তা শোনার কেউ নেই, বোঝার কেউ নেই। পারিপার্শ্বিকতার সাপেক্ষে তার মন হতাশার অন্ধকারে ছেয়ে যায়। তিলে তিলে তার মন ডিপ্রেশনের কালো ছায়ায় ঢেকে যায়। এমতবস্থায় একটা সময় এমন হলো যে, সে সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলো এবং ভাবতে লাগলো এ পৃথিবীতে তার কোনো মূল্য নেই, এ পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার কোনো কারণ নেই, মৃত্যুই তার জন্য শ্রেয়।
উপরোক্ত প্রেক্ষাপটটি এখন আমাদের দেশে খুব একটা অপরিচিত কিছু নয় কিন্তু দুঃখের ব্যাপারটি হচ্ছে চোখের সামনে মানুষটির বদলে যাওয়া সত্ত্বেও তার পাশে গিয়ে মানসিক সাহায্যের হাত টুকু বাড়িয়ে দেয়ার মতো মানুষের বড়ই অভাব হয়ে গিয়েছে। এর মূল কারণ মূলত “মানসিক স্বাস্থ্য” ব্যাপারটিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা বা মজার ছলে নেয়া। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে উঠে যখন দেখা যায় একজন শিক্ষিত মানুষ “মানসিক স্বাস্থ্য” বিষয়টিকে গুরুত্বহীন বলে মনে করেন এবং তার আশেপাশের মানুষদেরও এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেন। কিন্তু, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েক যুগ আগে ‘স্বাস্থ্য’-এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘কেবল নীরোগ থাকাটাই স্বাস্থ্য নয় বরং শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নামই স্বাস্থ্য।’ আমাদের অসচেতনতার ফলে ‘স্বাস্থ্য’ শব্দটি সীমাবদ্ধ হয়ে আছে শুধু ‘শারীরিক’ অংশটুকুর মধ্যে। আর তাই বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশেই মানসিক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ব্যাপারটি আরো কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায় যখন আক্রান্ত ব্যক্তি এ অবস্থায় বাবা-মায়ের সাহায্য পায় না। বর্তমান প্রজন্মের বাবা মা-রা তাদের সন্তানকে বুঝতে চাওয়ার চেয়ে বেশি তাদের “ভালো হবে” ভেবে নেয়া সিদ্ধান্ত সন্তানের উপর প্রয়োগ করাতে বেশি উদগ্রীব। যার ফলে পরবর্তী সময়ে যখন সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সন্তান সমস্যার সম্মুখীন হয় তখন হিতে বিপরীত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং সন্তান মানসিক ভাবে চরম ভেঙ্গে পরে। যা পরবর্তীতে মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে উঠে। উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরীদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাগুলো এখন খুব বেশি লক্ষণীয়। যার ফলে তাদের মঝে হতাশা, ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয় এবং আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে।
মানসিক অবসাদ, ডিপ্রেশন, বিষাদগ্রস্ত, আশাহীনতা এ সমস্যাগুলো বেশিদিন একজন মানুষের মাঝে স্থায়ী হলে পরবর্তীতে তা বিষে পরিণত হয়ে যায়,মোটা দাগে বলা যায় সমস্যাগুলো মানুষের জীবনে নিরব ঘাতকের ন্যায় কাজ করে এবং কর্মক্ষমতাহীন করে তোলে।এমতাবস্থায় মানসিক রোগের চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বাস্তব চিত্রে দেখা যায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-২০১৯ অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ১৬.৮% এবং এদের ১০০ জনের মধ্যে ৭ জন ভুগছেন বিষণ্নতায়। অথচ অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এর শতকরা ৯২ জন রয়েছেন চিকিৎসা আওতার বাইরে। অপরদিকে শিশু কিশোরদের মধ্যে এ হার ১৩.৬%। যাদের ৯৪% কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেনা। এমতাবস্থায় আমাদের সবার উচিৎ-
১. মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানো।
২. পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব আরো অর্থবহ করে তোলা দরকার।
৩. সমস্যাগুলোকে হাসি ঠাট্টার ছলে উড়িয়ে দেয়াতে আরো কতো বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে সেই ব্যাপারে সবার অবগত হতে হবে।কারণ, আজ আপনি সমস্যাগুলোকে হাসি ঠাট্টার ছলে উড়িয়ে দিলেও এর ভয়াল থাবা আপনার পরিবারের কাউকে আক্রান্ত করে তার মৃত্যুর কারণ উঠতে পারে এবং এমন কিছু হয়তো আপনি কখনোই চাইবেন না।
#worldmentalhealthmonth2022
#volunteerswriteup2022
Name: Atik Faisal
Department: Dep.-MPE, Program – IPE
Chapter Name: AUST