বর্তমান সময়টা পুরো বিশ্বের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখাটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনযাপন মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আমিও এই বৈশিষ্ট্যের বাইরে নই। ঘর বন্দী হয়ে থাকাটা আমিও পছন্দ করি না। অন্যসব দুরন্তপনা ছেলেদের মত আমিও একজন। আমিও চাই বন্ধুদের সাথে কাঁধে হাত রেখে কলেজে যেতে, মাঠে খেলতে, আড্ডা দিতে,কিন্তু এই বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে হঠাৎ দেখি আমাদের চলাফেরায় কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রথমদিকে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছিল বটে পড়ে কিন্তু ঠিকই মানিয়ে নিয়েছি। প্রথমদিকে কিছুটা খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে পড়াশোনায় এখন প্রচুর সময় দেওয়া যাবে।কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে দেখা গেল আমি পড়ছি ঠিকই কিন্তু কেমন একটা বিরক্তি নিয়ে অর্থাৎ পড়াশোনায় মন বসছিল না। শুধু পড়াশোনা করাটা কেমন জানি একঘেয়ে মনে হল। পরে চিন্তা করলাম কী করা যায়(?) যাহোক ভেবেচিন্তে নিজেকে যাতে ব্যস্ত রাখা যায় সে ব্যবস্থা করলাম। নিজের কাজের একটা রুটিন বানিয়ে ফেললাম। রুটিনে টানা একটা বিষয় না রেখে বিভিন্ন বিষয় এড করলাম। নিজেকেসম্পূর্ণ রুটিনে আবদ্ধ করে ফেললাম। রুটিনে আমার ভালো লাগার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিলাম। যেমন: প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখা,ইংরেজিতে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো, ভোকাবুলারি আয়ত্ত করা, রোবটিক্স নিয়ে চিন্তাভাবনা,এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইটে সময় দেওয়াটাও রুটিনের আওতায় নিয়ে এলাম। যখন আমি আমার ভালো লাগা গুলো করতে শুরু করেছি দেখলাম আমার সময়টা আরবিরক্ত লাগছে না,আগের মত আমি সময়টাকে উপভোগ করতে পারছি। তাছাড়া আমাকে ঘরবন্দি জীবনে মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে যেটা বেশি কাজ করেছে সেটা হল অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা। উল্লেখ্য, আমি এই কোয়ারেন্টাইনে যে পরিমাণ অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি অন্য কোন সময় তার আংশিকও করেনি। বিশেষ করে বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতা,রচনা প্রতিযোগিতা,অলিম্পিয়াড,কন্টেন্টরাইটিং প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় নিজেকে মাতিয়ে রেখেছি। পাশাপাশি এইসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজেকে যাচাই করার সুযোগ পেয়েছি। লেখালেখি করতে গিয়ে অনেক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হয়েছে। এভাবে প্রতিটা মুহূর্ত নিজেকে বিভিন্ন প্রোডাক্টিভ কাজে মেতে রেখেছি যা বলতে গেলে খেলার ছলেই করেছি। যখন লকডাউন শিথিল করা হচ্ছিল বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে লাগলাম। বাবাকে তার ব্যবসায় সাহায্য করতে লাগলাম। নিজেদের জগতের বাইরে যে আরেকটা জগৎ আছে যেটা খুবই প্রতিযোগিতামূলক,অসহিষ্ণু,নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলতে হয় সেটা উপলব্ধি করতে পারলাম। এটা আমার জীবনের অন্যতম শিক্ষা। এসব করতে করতে একসময় দেখা গেল অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছি বরং আগের চেয়েও বেশি। এভাবে এখনো চলছে। মানুষের জীবন খুবই সংকীর্ণ। এখানে সময় প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের থেকে তার পাওনা নিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ের গুরুত্ব তখনই উপলব্ধি করা যায় যখন এটার প্রকৃত ব্যবহার হয়।মনে রাখতে হবে,সামাজিক জীব আমাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলেও আমরা সৃষ্টির সেরা জীবও বটে। আমরা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারি। অর্থাৎ,মানসিকভাবে স্থিতিশীল ও অস্থিতিশীল থাকা অনেকটা আমাদের উপর নির্ভর করে। তাই সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। ধন্যবাদ।
Abdullah Al Reza
School/College Student
GB115