বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস পৃথিবীকে বিভিন্ন দিক দিয়ে গ্রাস করেছে। পৃথিবীর অগ্রযাত্রাকে কম হলেও একযুগ পিছিয়ে দিয়েছে। পাল্টে দিয়েছে পৃথিবীর স্বাভাবিক কর্মকান্ড। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন থেকে শুরু করে আমাদের গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বাধ্য হয়েছেন অনলাইনে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে। সাথে বাংলাদশ হারিয়েছে ৫ হাজারের বেশি এবং পৃথিবী হারিয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ প্রাণ। ( Source : www.worldometers.info › coronavirus / 27-09-2020)
করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশের জন্য মহামারী হলেও আমার জন্য আশীর্বাদই ছিল, কেননা দীর্ঘ সাধনার পরেও যেসকল সুযোগ সুবিধাগুলো পাচ্ছিলাম না করোনাভাইরাস আসার পর সেগুলো এমনি এমনিই হাতের নাগালে আসতে লাগলো।
শিক্ষাজগতে পরিচিত হওয়ার শুরু থেকে কোন কিছু না বুঝেই স্বপ্ন দেখলাম গবেষক হবার। দশজন শিক্ষার্থীর মতো আমারও স্বপ্ন ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো, কিন্তু সেই স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে গেল। বাধ্য হয়ে ভর্তি হলাম সরকারী তিতুমীর কলেজে অর্থনীতি বিভাগে। তবে সরাসরি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেও স্বপ্নের কাছে কখনোই হার মানা যাবে না। তাই প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই খুজতে শুরু করলাম কোথায় থেকে গবেষণা শিখা যায়? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক গবেষণা সংগঠন এবং সরাসরি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেলেও সবদিক বিবেচনায় Dhaka University Research Society (DURS) কে আমার জন্য বেশি উপযোগি মনে হলো। কিন্তু তাদের নিয়মিত প্রোগ্রামগুলোতে ক্যাম্পাসের বাহিরের কারো অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। সরাসরি প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে বিশেষ অনু্রোধ করলাম। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন সুযোগ দিতে না পারলেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমাকে গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস দেন। অবশেষে করোনাভাইরাস এসে আমার পথ সহজ করে দিলঃ
:
১. DURS এর শ্রদ্ধেয় কাজী শামীও শিস স্যার Research Methodology এর উপর Foundation Course শুরু করে অনলাইনে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিল মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেলাম।
২. ফেসবুক থেকে পরিচয় হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের Morshed Alam ভাইয়া শুরু করলেন অনলাইনে গবেষণার বেসিক কোর্স সেখানেও সুযোগ পেলাম।
৩. চুয়েটের শ্রদ্ধেয় Md. Sabir Hossain স্যার “গবেষক হতে চাই” ফেসবুক গ্রুপ থেকে শুরু করলেন “How to become a researcher” নামে পূর্ণাঙ্গ (পাবিলেকশন পর্যন্ত) গবেষণা কোর্স। সেখানেও বিশেষভাবে সুযোগ পেয়ে গেলাম।
৪. DURS এর প্রেসিডেন্ট Nasrin Jabin Ashan আপুও হঠাৎ জানালেন আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে একটা গ্রুপ খুলতে যাতে তিনি একসাথে অনেককে গবেষণা শিখাতে পারেন। অবশেষে আপুর সাথেও শুরু করলাম।
যে গবেষণা শিখার জন্য পাগলের মতো দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলাম, করোনাভাইরাস এসে সেই গবেষণা শিখার জগটতাকে আমার জন্য উন্মুক্ত করে দিল।
তবে একাডেমিক পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু গবেষণা দিয়ে তো আর চলে না। আবার স্বেচ্ছায় অর্থনীতি বিষয় বেছে নিলেও অনেকটাই কাটখোট্টা টাইপের মনে হয়। সহপাঠী ও ভালো বন্ধু ফারজানাকে একদিন অনলাইনে গ্রুপ স্টাডির আইডিয়া জানালাম এবং বেশ কিছু শর্ত দিলাম, যেগুলো এনে আমাদের গ্রুপে যুক্ত হতে হবে। কী ভীষণ একটা পরিশ্রমি মেয়ে! একদিনের মাথায় ১২ জনকে নিয়ে আসল। তাদের সাথে আইডিয়া, শর্ত এবং উদ্দেশ্য শেয়ার করলে প্রত্যেকেই স্বাগত জানিয়ে একমত পোষণ করল। শুরু হলো প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশোনা। আমাদের গ্রুপ স্টাডি যেমন ছিল আনন্দের , তেমন ছিল কার্যকর।
সবশেষে বলছি অনলাইন জগতের ক্লাস, পরীক্ষা, মিটিং ইত্যাদির কাহিনী। করোনাভাইরাসের আগে প্রায়ই EMK Center এ যেতাম। করোনাভাইরাসের কারনে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে প্রথম দিকে খাপ খাইয়ে নিতে পারছিলামা না। হঠাৎ একদিন EMK Center এর ইভেন্ট পেইজে Entrepreneur Mindset নামে একটি কোর্স দেখতে পেলাম । বিস্তারিত জানতে গিয়ে প্রথম Zoom Cloud Meeting এর নাম জানতে পারলাম। শুরু করলাম ঘাটাঘাটি এবং এক পর্যায়ে একাউন্ট করে নিলাম। পাশাপাশি ঐ কোর্সের রেজিঃও করে নিলাম। উদ্দেশ্য কমপক্ষে জুমের ব্যবহার শিখা। ২৯ এপ্রিল ২০২০ থেকে শুরু হলো ক্লাস। প্রথমদিন শুধু পর্যবেক্ষণ করেছি। দিত্বীয় দিন কয়েকটি গ্রুপ করে দেয়া হয় এবং আমার গ্রুপে পেয়ে গেলাম কয়েকজন ভীষণ ভালো মনের মানুষ। যাদের মধ্যে আমি সবচেয়ে জুনিয়র হলেও তাদের আচরণ আমাকে তা বুঝতে দেয় নি। টানা ২০ দিনের এই কোর্সে পৃথিবীতে আইডিয়া বাজির কারিশমা টা খুব ভালো করেই উপব্ধি হল। কিছুদিন পর হঠাত ইমেইলে সার্টিফিকেট আসলে কী যে একটা উত্তেজনা কাজ করছিল। কারণ অনলাইনে এটাই ছিল প্রথম অভিজ্ঞতা।
সবকিছু মিলিয়ে পারিবারিক কিছু অর্থনৈতিক প্রভাব ছাড়া করোনাভাইরাস এর আর কোন প্রভাবই আমি উপলব্ধি করে পারিনি। তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করায় যদি প্ত্রপ্ত্রিকায় খোজখবর না রাখতাম, তাহলে হয়তো গ্রামের সাধারণ মানুশের মতো আমিও বলতাম করোনা-মরোনা বলতে কিছু নাই। সবই গুজব।
করোনাভাইরাস আমার শারীরিক ও মানসিক ভাবে কোন নেতি বাচক প্রভাব না ফেললেও বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এমনকি আমার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচণ করে দিয়েছে। বিশেষ করে গবেষণা সম্পর্কিত যেসব তাত্ত্বিক ও ব্যবহা্রিক জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি, আশাকরি এখন কোন ভালোমানের গবেষকের কাছে উনার সাথে কাজ করে গবেষণার প্রত্যক্ষজ্ঞান অর্জন করার জন্য আবেদন করতে সাহস পাব। আমার এই যাত্রা ছিল পুরোপুরি “সস্তা পেয়ে বস্তা ভরে (জ্ঞান) নেয়ার মত”।
Ali Ahmed
University Student
GB055