লকডাউন করব জয়

কোভিড-১৯, ইংরেজিতে যদি বলতে চাই তবে ‘Corona Virus Disease’, কতটা পাল্টে দিয়েছে আমাদের পথচলা, তাই না! হাস্যরসে মুখর প্রত্যেকটা জাতি আজ অনিশ্চয়তার বিড়ম্বনায় কাটাচ্ছে প্রতি মুহূর্ত। আতিথেয়তা প্রিয় বাঙালীও আজ কোনো অতিথিকে আপ্যায়ন করতে পারছে না মন খুলে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে যেখানে জমত বন্ধুদের প্রাণের আড্ডা, সেখানে সৌজন্য সাক্ষাৎকারেও মিলছে না আজ একটি সত্তা। ভয়, দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা – নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, সবার জন্য।এই একটুখানি ভুল কেড়ে নেবে না তো আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে। বুকে ভরে নিঃশ্বাস নিতেও আজ বড্ড ভয় করে এই পৃথিবীবাসীর।

আমরা হয়ত ধারণা করিনি যে এমন স্থবির, নিরানন্দ, এবং অনিশ্চয়তায় পূর্ণ কালোছায়াময় সময় নেমে আসবে কোনো একদিন। তাই বড় দিশাহীন লাগে। কিন্ত ক্ষণিকের এই জীবন কি বারবার আসবে। এই মহামারী না আসলেও প্রতিনিয়তই তো আমাদের মধ্যে থেকে কত জীবন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই বলে কি আমরা আমাদের মনোবল হারিয়ে ফেলব? দু মিনিটও যদি বাঁচি,তবে সেই সময়টাই সাজিয়ে ফেলি না জীবনের! শরীরের মৃত্যুর আগেই আমাদের প্রাণের মৃত্যু তো হতে দেওয়া যায় না।

আজও সকালে সূর্য ওঠে তাই না! ভোরের কিরণের দিকে তাকিয়ে তাই প্রতিদিন ভাবি যে একদিন না একদিন অন্তত এই সূর্যরশ্মির প্রদাহে নিষ্কাশিত হবে মানুষের সকল অনিষ্ট। কোয়ারেন্টাইন অথবা লকডাউন যেটাই বলি না কেনো, আসলে তো আমরা সকলেই এখন গৃহবন্দী। তাই এই বন্দীদশা কাটানোর দিনগুলোকে ফিকে করে জীবনের এতগুলো মূল্যবান সময় নষ্ট করা যাবে না কিছুতেই। রান্নাঘরে মায়ের সাথে রান্নায় সাহায্য করা, কখনো মাকে বলা যে মা তুমি আজ ছুটি নিয়ে আরাম করো, সব কাজ আমি করব; ঘরগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা ;শখের যে কাজগুলো নিত্যকার ব্যস্ততায় চাপা পড়ে গিয়েছিল সেগুলোকে নতুন করে ধুলো ঝেড়ে ফিরিয়ে আনা ; গল্প ,উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী কিংবা হোক না অন্য যেকোনো বই -জ্ঞানের উৎস তো টা বটেই সেটাকে নিয়ে কিছুটা সময় পার করা ;ধর্মীয় কাজগুলো করা; পরিবারের মানুষগুলো যেমন ছোট অথবা বড় ভাইবোন তাদের সাথে দুষ্টুমি করা অথবা যদি মনমত অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করে তবে সেগুলো নিয়ে মেতে থাকা; সবচেয়ে বড় কথা আমরা আমাদের পরিবারের সাথে আছি- ব্যস বিরক্তি কিংবা হতাশার জন্য সময় কোথায়! এই সব কাজ একসাথে জড়ো করলে সময়ই তো বাঁচে না।

কিন্তু এর মধ্যেও অনেকগুলো সময় কেটে যায় দুশ্চিন্তায়। বাবা সবসময় অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছেন। এটা ওটা সাংসারিক জিনিস কিনতে উনাকে মানুষের মাঝে যেতেই হচ্ছে। উনি ভালো আছেন তো? তাছাড়াও মানবতার খাতিরে বিশ্ববাসীর প্রতিও কিছুটা দায়িত্ব থেকেই যায় আমার। এই মহামারীতে যদি সবার কথা না ভাবি তাহলে মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয়ই কীভাবে দেবো! যখন এইসকল দুশ্চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ঠিক তখনই আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ! তুমি রক্ষা করো আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পুরো বিশ্বকে। অদ্ভুত এক প্রশান্তি তখন নেমে আসে এ মন জুড়ে।মনে হয় সৃষ্টিকর্তা আমাদের রক্ষা করবেন।

আসলে এই মহামারীতে আমরা কেউই পরিপূর্ণ শান্তিতে নেই।প্রত্যেকটা মানুষের প্রত্যেকটা দিকই কোনো না কোনোভাবে বিপর্যস্ত।তাই আগের মত হেসেখেলে জীবন হয়ত আমরা কাটাতে পারব না।কিন্তু তারপরেও শুধু হতাশায় ঘিরে রেখে যদি জীবনের এই সময়গুলো নষ্ট করি, তবে জীবনের এক পর্যায়ে গিয়ে নিজের কাছে নিজেই অপরাধী হয়ে যাব। আর সেখান থেকে নিষ্কৃতি পেতেই এভাবে কাটছে আমার কোভিড-১৯ এর মাঝে বয়ে যাওয়া জীবন। আর চেষ্টা করব যেনো নিজের মনোবলকে এভাবেই ধরে রাখতে পারি ইনশাল্লাহ।

Khandaker Nayma Akter Noon

University Category

GB027

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *