চীনের উহান প্রদেশে অতর্কিত আক্রমণের অল্পদিনের মাথায় বাংলাদেশেও আঘাত হানে কোভিড–১৯ নামের অজ্ঞাত এক ভাইরাস। অপ্রতিরােধ্য এই ভাইরাসকে রুখতে পুরাে বিশ্বব্যাপী লকডডাউনের ধুম পড়ে যায়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হ্যনি। প্রাথমিকভাবে সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলােতেও এর প্রভাব পড়ে। স্থবির হয়ে যায় পুরাে বিশ্ব। লাশের স্তুপে হাহাকার করে উঠে পুরাে পৃথিবীর আকাশ–বাতাস। এই ভাইরাস সংক্রামক। হওযায়, চিকিৎসা পেতেও বেশ হিমশিম খায় রােগীরা। কেউ চিকিৎসা পাচ্ছে না, কেউ দিনের দুবেলা খাবার পাচ্ছে না, কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছে, করােনাক্রান্ত কাউকে আবার বাসার নিষ্ঠুর মালিক বাসা থেকে বের করে দিচ্ছে প্রভৃতি মিশ্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে আমার মতাে অনেকেই মানসিকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
দেশব্যাপী বহুদিন লকডডাউন থাকার পরে, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলাে খুলে দিলেও বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলাে। চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে আমারও ক্যাম্পাস বন্ধ। তখনই গ্রামের বাসায় আছি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশ আশাবাদী মানুষ। হাজারাে সমস্যার মাঝেও সম্ভাবনা খুঁজি। সমস্যাগুলােকে আঁকড়ে ধরে, সমস্যা আরাে বাড়িয়ে ভেঙে পড়ার মতাে দূর্বল মনােবলের মানুষ আমি না। এই কোভিড–১৯ মহামারী, পুরাে বিশ্বের অনেক বড় ক্ষতি করেছে, এটা যেমন সত্য। ঠিক তেমনি, বিশ্বের বহুবিধ উপকারও যে করেছে এটাও বিবেকবান মানুষমাত্রই স্বীকার করতে বাধ্য হবে।
যেমন– আমার কথাই ধরুন। পড়ালেখার সুবাদে ছােট থেকেই পরিবারের বাইরে থাকি। আব্দু–আম্মু, ছােট–বােনদের সাথে একান্তে সময় কাটিযেছি খুব কম। কিন্তু, এই লকডডাউন আমাকে পরিবারের সাথে একান্তে সময় কাটানাের সুযােগ করে। দিয়েছে। পরিবারের সকলের সাথে আমার সম্পর্ক, আবেগ–অনুভূতি বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। শুধু আমিই না, এরকম হাজারাে পরিবারে, নিজেদের মধ্যেকার সম্পর্ক বহুগুণে বেড়েছে বলে আমার বিশ্বাস।
এরপর, বই পড়া। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশােনার দরুন একাডেমিক পড়ালেখার বাইরের পড়ালেখার সময় খুব থাকে। কিন্তু, এই মহামারী আমাকে সেই সুযােগটি করে দিয়েছে। অসংখ্য বই পড়েছি এই সময়ে।
শুধু বই পড়া নয়, এর পাশাপাশি বিভিন্ন কো–কারিকুলার স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি সুবর্ণ সুযােগ ছিল এই লকডডাউন। এটি আমাকে অনেক উপকৃত করেছে।
ব্যক্তিগত উপকারিতা বাদ দিয়ে, যদি সমাজজীবনে কোভিড–১৯ মহামারীর ইতিবাচক দিকগুলাে দেখি, তাহলে আমরা অসংখ্য ইতিবাচক দিক দেখতে পাই। এই মহামারীর কারনে শহরের পাশাপাশি গ্রামের নিরক্ষর মানুষগুলােও রােগ–জীবানু থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা পেয়েছে। সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরিধান করা সহ অন্যান্য সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জনসাধারণের অংশগ্রহণ আমাদের মতাে দৃষিত দেশের জন্য অনেক ইতিবাচক দিক।
এই বস্তুবাদী সমাজের দ্রুত বর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রকৃতির অবস্থা ছিল বড়ই করুণ। চারদিকে গাছপালা কেটে একাকার, জীববৈচিত্র্যের অবস্থা সংকটাপন্ন। মহামারীর এই সময়ে এই সংকটাবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। প্রকৃতি তার সজীবতা ফিরে পেয়েছে। জীববৈচিত্র্যের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের হার হঠাৎ করে অনেকটাই কমে গেছে। বিশ্বব্যাপী কয়েক মাসের স্থবিরতার ফলে, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মিকে বাধা প্রদানকারী ওজোন স্তরের ফুটোগুলাে বন্ধ হয়ে গেছে অনেকটা।
এসব চিন্তা করলে, এই মহামারীর সময়ে তৈরী হওয়া মনের ক্ষতটা অনেকটাই কমে যায়।
কিছু টুকরাে ঘটনা ছাড়া, মহামারীর এই সমযে আশেপাশের মানুষদের মানবিকতা, মনুষ্যত্ববােধ, অন্যের প্রতি। দরদ–ভালােবাসা, অন্যের খোঁজখবর নেওয়া, গরীব–অসহায় মানুষদের জন্য দান করতে উৎসাহী হওয়া প্রভৃতি। আশাব্যঞ্জক বিষয়গুলাে । মহামারীর এই সমযেও আমাকে ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখতে অনুপ্রাণিত করে। মনের মাঝে সাহস যােগায়। কেউ যেন মনের গহীনে চুপিচুপি বলে যায়, “মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।”
Md. Abu Raihan
University Category
GB113