মহামারীর দিনগুলোতে সুখ-দুঃখ

করোনা মহামারীর দিনগুলো জীবনের খাতায় এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা যোগ করছে সেটা বলাই বাহুল্য একটু একটু করে অনেকটা ঘোরের মধ্যেই যেনো সময়গুলোয় চলে গেলো লকডাউনের প্রথম দিকে বাড়িতে বসে দিনকাল মন্দ কাটছিলোনা পরিবারের সবার স্কুলকলেজবিশ্ববিদ্যালয়অফিস সব বন্ধ বহুদিন বাদে সবাই এমন একসাথে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছি ছোটোদের সাথে লুডুদাবা ইত্যাদি ঘরোয়া খেলা রীতিমত রোজকার রুটিন হয়ে দাড়িয়েছিলো ধনী হবার মজার খেলা খেলে আদতে ধনী না হওয়া গেলেও তা মনারঞ্জনের খোরাক জুগিয়েছে বেশ 

লকডাউনে বাইরে বেরুতে না পারার দুঃখ ভুলতে বিকেল না গড়াতেই বাসার ছাদে চলে যেতাম একটু মুক্ত আকাশ এর খোঁজে ঘুড়ি উড়ানো, বাচ্চাদের শোরগোল, বয়স্কদের গল্পগুজব আড্ডা সব মিলিয়ে লকডাউনের বিকেলগুলো যেনো ক্ষণিকের জন্য হলেও উৎকণন্ঠা দূর করে মনে এনে দিয়েছিলো প্রশান্তি। 

 

করোনার শুরুর দিকে বেশ টানটান সতর্কতা সবার মধ্যে মাস্কস্যানিটাইজারহ্যান্ডওয়াশ নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধের প্রস্তুতি করোনা সচেতনতার অংশ হিসেবে বাড়ির আশেপাশে সতর্কতামূলক কিছু পোস্টারও টানিয়ে দিয়েছিলাম লকডাউনে কাজ কর্মহীন ঘরে বসে থেকে জমে থাকা অনেকগুলো বিদেশী টিভি সিরিজ শেষ করে ফেললাম একে একে ফাঁকে ফাঁকে মুভি দেখাও হয়েছে বেশ মুভিসিরিজ দেখে সময় পার করেছি বলে সময়গুলো কেটেছেও ভালো অন্যদিকে আমি আবার বেশ বইয়ের পোকাও যদিও আজকাল স্ক্রীনের আগ্রাসনে বইয়ের পাতায় মন বসানো মুশকিল হয়ে যায় তবুও এর মধ্যে শেষ করে ফেললাম বইমেলা থেকে কেনা চমৎকার কিছু বই

 

ছোটোবেলা থেকেই আঁকাআকির প্রতি আমার প্রচন্ড ঝোক থাকলেও আলসেমির কারণে ধুলো জমছিলো রঙতুলিগুলোর উপর এই বন্ধের সুযোগ পুরনো শখটাকে জাগিয়ে তুলে রাঙিয়ে ফেললাম ঘরের দেয়াল, মাটির পাত্র আর পুরনো চেয়ারগুলোকে এটা ঠিক যে সময়ের স্রোতে চেয়ারগুলোর মত আমার আঁকাআকিতেও খানিকটা মরিচা ধরেছে; কিন্তু বাসার বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে এই কাজগুলো করতে যে আনন্দ পেয়েছি সেটাই বোধকরি আসল প্রাপ্তি

 

লকডাউনের মধ্যে অনেকের দেখাদেখি ইন্টারনেটে বিভিন্ন কোর্স করার ঝোক উঠলো। সেই মোতাবেক কোর্সেরা তে চাইনিজ ভাষা শেখার কোর্সে অন্তর্ভুক্ত হলাম আবার মাঝখানে ইচ্ছে হলো হলিউডি মুভিতে সিজিআই এর যেসব কাজ হয় তা শেখার সেটাও কিছুদিন শিখলাম ইউটিউব দেখে দেখে ডিজিটাল ড্রয়িংও শেখা শুরু করলাম কিন্তু সব কিছুই কদিন বাদে মুখ থুবড়ে পড়লো আমার মহা কুড়েমির কাছে সব কিছুই পরাস্ত

 

বাসায় বসে থেকে মন প্রফুল্ল রাখবার জন্য খেলাধুলা, মুভিসিরিজবই, আঁকাআঁকি সবই তো হচ্ছিলো ভালো কিন্তু আস্তে আস্তে হতাশা জেঁকে বসলো মাথায় শুয়েবসে থেকে স্বাস্থ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানসিক অবসাদ এর সাথে সামনে চাকরিবাকরি খোঁজার দুশ্চিন্তা, সমাজের তথাকথিত স্ট্যাটাস সম্পন্ন চাকুরি না পেলে নামলিখাতে হবে বাতিলের খাতায়। অন্যদিকে রয়েছে সামাজিক গণমাধ্যমের রঙিন দুনিয়ার বিষাক্ত প্রভাব। ভার্চুয়াল বন্ধুদের কোন সফলতার গল্পে লাভ রিয়েক্ট দিলেও মনের মধ্যে ছোট হলেও যেন একটা খোঁচা লাগে। ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে অন্যের ঝকঝকে জীবন নিজের ভেতরকার ইনসিকিউরিটি বাড়িয়ে তোলে। একটু একটু করে যেনো ভারি হতে থাকে ডিপ্রেশনের পাল্লা।

 

তবু দুঃশ্চিন্তা দূরে ঠেলে চেষ্টা করি মন ভালো রাখতে। ইদানিং পড়ার টেবিলে মন দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন হালকা পাতলা ব্যায়াম করার অভ্যাসও গড়ে তুলছি আস্তে আস্তে। কমিয়ে দিচ্ছি অতিরিক্ত সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারের অভ্যাস। যেসব কাজে মন ভালো থাকে সেগুলোর মাধ্যমে মন ভালো রাখার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি সব ধরণের নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকতে। আমি জানি এই করোনাকালে হাত গুটিয়ে বসে থাকা হতাশার জন্ম দেবেই। তবু সব মন্দ জয় করার আশায় লড়ে যেতে হবে, বুক বাধতে হবে নতুন আশায়। কারণ বিশ্বাস করি একদিন না একদিন এই অমানিশা কেটে যাবেই, আঁধার পেরিয়ে দেখা দেবে এক নতুন ভোর। 

 

আদনান নাদীভ অয়ন

University Category

GB053

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *