সারাদিন রোজা থেকে সন্ধ্যায় ইফতারির সময় পেঁয়াজু আর বেগুনী আমার চাই-ই চাই। গতবছর রমজানে ঢাকায় ছিলাম, আর পরীক্ষার ব্যাস্ততায় এটা সেটা পছন্দের খাবার খেতে পারিনি। এবার তো বাসাতেই ছিলাম। কিন্তু এবারেও বিধি বাম! বাজারে লকডাউন চলছে। কি করি কি করি ভাবতে ভাবতেই, ইউটিউব দেখে গ্যাসের চুলায় বানিয়ে ফেললাম পেঁয়াজু আর বেগুনী।
সম্প্রতি করোনা প্যানাডেমিক দেশে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন হাজার- লাখো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, নানান চেষ্টা সত্ত্বেও কত প্রিয়জন হারিয়ে যাচ্ছে! চারদেয়ালের ভেতর নিজেদের সময়টা এমন হয়ে উঠছে যে স্নায়ুর উপর প্রচন্ড চাপ পড়ছে, তাছাড়া বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তো আছেই।
আমার অনেকবার মনে হয়েছে আমি আমার ডিপ্রেশনের চুড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছি, আর পারছি না! সেদিন “ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ” এর করা একটা জরিপে দেখলাম, ২০১৯ সালে মানুষের বিষণ্ণতাজনিত সমস্যার হার ছিলো শতকরা ৬দশমিক ৭ভাগ, যা এইবছর বেড়ে হয়েছে শতকরা ৩২দশমিক ২ভাগ, আর উৎকন্ঠাজনিত সমস্যা শতকরা ৪দশমিক ৫ভাগ থেকে বেড়ে শতকরা ৪৭দশমিক ৩ভাগ হয়েছে। আমার মনে হলো এভাবে থাকা সম্ভব নয়, আমার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। এতো ডিপ্রেসড হওয়ার পরে, এখন যেভাবে আমি আমার ইতিবাচক মনোভাব ধরে রেখেছি তাই বলবো আজকে।
- আমার কি করোনা হয়েছে?
আমার মনে হয় প্রায় সবাই এরকম ভেবেছিলো, আমার কি করোনা হয়েছে? কি হবে এখন! এমনকি অনেকে তো নিজের মধ্যে সব লক্ষণ-ই দেখতে পান করোনার, সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন নিজেকে, যেমনটা আমিও করেছি। পরে রিসার্চ করে জানতে পারলাম, অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্থ থাকলে আমাদের শরীরে এপিনেফ্রিন, নর এপিনেফ্রিন, আর কর্টিসল নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয় যার ফলে মনে হয় আমরা শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি, জ্বর, বমি, পেট ব্যাথা অনুভূত হয়। আসলে সবারই করোনা হবে এমন কোনো কথা নেই। সঠিকটা জানি, আর সঠিকটাই যেনো মানি। তেমন অসুবিধা দেখলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারি। উল্টাপাল্টা ভেবে অতিরিক্ত প্যানিকড হবার কিছুই নেই।
- সময় আমার কাটেনা!
করোনার কারণে আমাদের জনজীবনে বিস্তর পরিবর্তন এসেছে। অনেকবার মনে হয়েছে, ইশ! আমি যদি ওটা করতে পারতাম। কিংবা সবাই কিছু না কিছু ক্রিয়েটিভ করছে আর আমি বসে আছি, এই ধরনের নেগেটিভ চিন্তা নিয়ে পড়ে থাকাটা আমার কাছে ক্ষতিকর মনে হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি বর্তমান নিয়ে থাকার, মানিয়ে নেবার চেষ্টা করেছি। বাসায় লুডু খেলা, ক্যারম খেলা, গান শোনা, রান্না-বান্নায় মাকে সাহায্য করা কিংবা বই পড়া সময় কাটানোর উত্তম উপায়। এছাড়া মেডিটেশন, ব্যায়াম কিংবা নিজেকে জানার চিন্তা আমাকে অনেক বেশি উপকৃত করেছে, সাহায্য করেছে নিজের ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে।
- কি করবো, কি করবো না।
আমরা সবাই নিজেকে ভালোবাসি, তাই নিজের জন্যে কোনটা ভালো এই ভেবে কাজ করাই বেস্ট চয়েস। আমি নিজের প্রয়োজনে আমার আস্থাভাজন কিছু মানুষের পরামর্শ নিয়েছি, যাদের সাহচার্য ছাড়া আমার ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখাটা অসম্ভব ছিলো। নিজের পরিবারকে আরো বেশি জানার চেষ্টা করেছি, আরো নিবিড় হয়েছি। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে নিজের মন প্রশান্ত হয়েছে প্রত্যেকবার। লকডাউনের এইসময়ে অতিরিক্ত খবর দেখা, করোনাকেন্দ্রিক পোস্ট বেশি বেশি দেয়া/দেখা, অতিরিক্ত চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছি। পর্যাপ্ত ঘুম, নিজের চেষ্টা, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আর প্রিয় মানুষদের সাহায্য, ভালোবাসা আমাকে নিজের ডিপ্রেশন কাটিয়ে খুশি এবং ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে সাহায্য করেছে, করছে।
কেবল নিরোগ থাকাই স্বাস্থ্য নয়, বরং শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নাম-ই স্বাস্থ্য(বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা,১৯৪৮)। বেঁচে থাকার জন্যে আমাদের ভালো থাকা প্রয়োজন, আর ভালো থাকার জন্যে প্রয়োজন ইতিবাচক মনোভাব।।
MD. Sourav Hasan
University
GB079