ইতিহাস লেখার সুযোগ পায় শুধুমাত্র বিজয়ীরাই।যুগ যুগ ধরে তাই চলে আসছে।চলতে থাকবে সৃষ্টির শেষ লগ্ন পর্যন্ত।রোগজীবাণুর সাথে মানুষের যুদ্ধ নতুন নয়।আদ্যিকাল থেকে মানুষ লড়ে আসছে তাদের বিরুদ্ধে।আর অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি,প্রতিবারই এই যুদ্ধে বিজয়ীর বেশে মানুষ।ভয়ানক সব রোগ-ভাইরাস,যেগুলো একসময় খুব দাপট চালিয়েছিল,কয়েক মাসে উজাড় করে দিয়েছিল একেকটি জাতিকে,সেসব আজ শুধু ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হিসেবে স্থান পেয়ে আছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চতুর্দশ শতাব্দীর ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত প্লেগকে।এই ভয়াবহ অসুখটিতে প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
তারপর বলা যায় ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু এর কথা,যা পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল প্রায় ৫ কোটি মানুষকে।
ইবোলা,পোলিও,সার্স,মার্স,ডেঙ্গু আরো কত কত রোগের কথাই তো বলা যাবে,যে রোগগুলো কাবু করতে চেয়েছিল মানবজাতিকে।তবে সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে।আমরা হার মানিনি।এই হার না মানা মনোভাবের জন্যই বোধ হয় আমরা জয় করতে পেরেছি অসাধ্যকে।হারাতে পেরেছি এসব মারণঘাতি মহামারিগুলোকে।
তেমনি এই ২০২০ সালে এসে কোভিড-১৯ তথা করোনাকেও হারাতে পারবো আমরা।তা আজই হোক বা কালই।
এই মহামারি পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের তরুণদের মাঝে যে মানসিক ব্যাধিটি বেশি দেখা দিচ্ছে,তার নাম হলো Agroaphobia.সোজা বাংলায় এর অর্থ করলে দাঁড়ায়,লোকসমাগমপূর্ণ স্থানে বের হওয়ার ভয়।
করোনা পরিস্থিতির আগে এই ফোবিয়া ১.৭% মানুষের থাকলেও,বর্তমানে তা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।বিশেষজ্ঞরা কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন,টানা অনেকদিন বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা এবং বাইরে করোনা ভাইরাসের ভয় থাকার বিষয়টি।তাই এসময় মানসিকভাবে সুস্থ থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।
কোয়ারেন্টাইনের শুরুর দিকের কথা আমার মনে আছে খুব ভালোভাবে।বেশ কদিন কলেজের পড়া থেকে ছুটি পাব ভাবতেই মনটা ভীষণ চনমনে হয়ে উঠেছিল।প্রথম এক মাস বলা যায় খুব আনন্দেই কাটালাম।তারপরেই শুরু হলো বিপত্তি!বাসায় বসে থাকতে আর কতই বা ভালো লাগে!বন্ধুদের সাথে অনেকদিন দেখা হয়না ভাবতেই মনটা এক তীব্র দুঃখবোধে ভরে যায়।তখন কীভাবে নিজেকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখতে পারবো,সেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।
বরাবরের মত এবারেও আমার লাইফলাইন মা।মায়ের সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতেই,মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মা আমাকে কিছু গঠনমূলক ও শিক্ষণীয় বই পড়তে বললেন।একাধারে পড়তে লাগলাম গল্পগুচ্ছ,পথের পাঁচালির মত বইগুলো।বই পড়ার নেশাটা মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া।কোয়ারেন্টাইনে নেশাটা যেন বেড়ে গেল কয়েকগুণ।
বই পড়তে পড়তে যদি কখনো একঘেয়েমি লাগে,তখন বসে পড়ি কিছু রুচিশীল,গঠনমূলক মুভি নিয়ে।এই যেমন Forrest Gump,Life Is Beautiful ইত্যাদি।মুভির হাসি কান্না,আনন্দ বেদনার মাঝে কীভাবে যে নিজেকে হারিয়ে ফেলি,সময়টা যে কীভাবে কেটে যায়,তার হদিস পাই না।
এরপর মাস তিনেক কেটে যাওয়ার পর কলেজ থেকে শুরু হলো অনলাইন ক্লাস।সারাক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে না ঠিকই,কিন্তু কীইবা করার আছে এমন সংকটময় মুহূর্তে?ইংরেজিতে বলা হয়,Every success needs a sacrifice.এই ছোট ছোট কিছু Sacrifice-ই হয়তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে করোনার করালগ্রাস থেকে।
ভিডিও কলে বন্ধুদের সাথে কথা বলা,ফ্যামিলির প্রতিটি মেম্বারের সাথে হাসি-ঠাট্টা করা,সুবিধা অসুবিধার বিষয় পরস্পরের কাছে তুলে ধরা,বাবা মায়ের কাছ থেকে তাদের ছোটবেলার গল্প শোনা,সময়মতো ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালন করা,এসব করেই আমি নিজেকে সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় মানসিকভাবে যথেষ্ট সুস্থ রাখতে সক্ষম হয়েছি।
মানসিক সুস্থতার আরেকটি কারণের কথা না বললেই নয়।আমি বিভিন্ন বিষয়ে ভাবতে ভীষণ পছন্দ করি।কল্পনার এই শক্তিই হয়তো আমাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাসের যোগান দেয়।করোনা মহামারি শেষ হলে কী কী করবো,মূলত তাই নিয়েই আমি ভাবি।হয়তো এই ভাবনার মধ্যেই বেঁচে থাকবো আমি।শেষ করি ভাবনার বিষয়ে দার্শনিক রেনে দেকার্তের অসম্ভব বিখ্যাত একটি উক্তি দিয়ে-
“Cogito,ergo sum.”
যার অর্থ হলো, “I think,therefore,I exist!”
Rakin Montasim
School & College Student
GB066