দুর্বিষহ কোয়ারেন্টাইন

কি এক আশ্চর্য পরিবর্তনের মাধ্যমে মােড় নিল এই পৃথিবী, এই ধরণী মায়ের গতি। চেনা-অচেনা সবকিছুরই এক অজানা রূপ দেখিয়ে দিল ২০২০। স্থিতি অস্থিতি সুস্থিতি ইত্যাদি কত রকমেরই বৈজ্ঞানিক শব্দের ব্যবহার দেখিয়ে দিল ২০২০ মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে।

কোভিড-১৯ এসে বিচ্যুত করে দিল সমগ্র পৃথিবীর স্বাভাবিক ভারসাম্য, থমকে দিল প্রকৃতিকে, নষ্ট করে দিল জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। কোয়ারেন্টিন, আইসােলেশন নামে আরাে কত নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হলাম আমরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হলাে যে “ঘরে থাকুন, সেল্ফ কোয়ারেন্টিনে থাকুন।” সেল্ফ। কোয়ারেন্টিন বা প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব অত্যন্ত প্রকট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মহামারী মােকাবেলায় মানুষ ঘরে অবস্থান করছেন। তবে যারা নিয়মিত কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, ভ্রমণপিপাসু তাদের ক্ষেত্রে লকডাউনটা খুব কঠিন সময়। বিশেষ করে শিশু – বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এক জায়গায় থাকতে থাকতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

এর প্রভাবে কোরেন্টিনে থাকা ব্যক্তির দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ, রাগ, ঘুমের সমস্যা, বিষন্নতা দেখা দেয় এমনকি পােস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) হতে পারে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এনজাইটি ইউকের নিকি লিডবেটার বলেন,” নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ভয় এবং অনিশ্চয়তা মেনে নিতে না পারাই এনজাইটি ডিজঅর্ডারের সাধারণ লক্ষণ।”

স্বাভাবিকভাবেই মানুষ কোরেন্টিনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে মহামারী মােকাবেলা সম্ভব নয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বলেছে মানসিক দৃঢ়তা ও শক্তি যার বেশি তারাই নেক দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। তাই এ সময় মানসিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। অধিকাংশ মানুষই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নিজেদের শরীর ও স্বাস্থ্যকে বেশি খারাপ করছেন।

তাই আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই কিভাবে কোয়ারেন্টিনে আমি নিজের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছি

(১) প্রথমত আমি নিজের জন্য একটি রুটিন বানিয়ে নিয়েছি এবং প্রতিনিয়ত সেই রুটিন অনুসারেই চলার চেষ্টা করি। আমার খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, পড়ালেখার সময়, বিনােদনের সময় এসবই নির্ধারিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত।
(২)ভয, হতাশা, বিরক্তি, আর্থিক ক্ষতি কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন মানসিক রােগের কারণ হয়। তাই আমি এসব চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকার চেষ্টা করি।
(৩) এখন যেমন অনেক ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইনে, তেমনি অনেক সংবাদমাধ্যম একটা ছােট ঘটনাকে বড়। করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করছে। যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্য আরাে বেশি বিপর্যস্ত হচ্ছে। তাই আমি শুধু বিশ্বাসযােগ্য সংবাদমাধ্যম থেকেই সংবাদ সংগ্রহ করি।
(৪) যতটা সম্ভব সংবাদ ও গণমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। কেননা ভয়াবহ খবর আমাদের মধ্যে আরও বেশি ভীতির সঞ্চার করতে পারে। তারচেযে সেটা না জানাই ভালাে।
(৫) নিজের পছন্দনীয় কাজ করার মতাে আনন্দ মানুষ আর কিছুতেই পায় না। তাই প্রতিনিয়ত আমি নিজে যা পছন্দ করি তা কিছুটা সময়ের জন্য হলেও করার চেষ্টা করি যাতে আমি অন্যান্য যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকতে পারি।
(৬) আমরা সাধারণত নিজেদের পরিবারেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বােধ করি। তাই পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে বাবা মায়ের সাথে আমি বেশি সময় কাটানাের চেষ্টা করছি।
(৭) আপনার বন্ধু-বান্ধবরাই আপনাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিতে পারে। তাই তাদের সাথে সবসময় যােগাযােগ রাখার চেষ্টা করি। সেটা সােশ্যাল মাধ্যমে হােক বা স্বাভাবিকভাবে কল করার মাধ্যমে।
(৮)বয়স্করা যেহেতু মৃত্যু ভযে ভুগতে পারেন তাই তাদের সঙ্গে সময় কাটানাের চেষ্টা করতে হবে বেশি বেশি।
(৯) শিশুদের এমনভাবে ব্যস্ত রাখতে হবে যাতে তারা একাকীত্বে না ভােগে। তারাই সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর। তাই আমি ছােট ভাইবােনদের মানসিক স্থিতিশীলতার দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।
(১০)পরিবারের সবাই একসাথে ঘরােযা খেলাধুলা করে সময় কাটাচ্ছি।

সবশেষে বলতে চাই আমরা সবাই যেনাে এই কঠিন সময় অতিক্রম করতে পারি এবং সবাই নিয়মগুলাে মেনে সুস্থ থাকি।

MD Farhan Gazi
School/College
GB118

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *