এই সুন্দর পৃথিবীতে হঠাৎ নেমে এলো এক অভিশাপ, করোনা। সবকিছু থমকে গেল। এখন আর ইচ্ছে হলেই বের হওয়া যায় না, থাকতে হয় ঘরে৷ জীবন বাঁচাতে সবাই এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে। আর কোয়ারেন্টাইন মানেই যেন বন্দিদশা৷ কিন্তু এর মাঝেও মুক্তির আনন্দ পাওয়া যেতে পারে। সারা বছরের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি।নিজের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগটা কাজে লাগাতেই পারি। কিন্তু একে তো করোনার ভয়, তার মাঝে সারাক্ষণ ঘরে থাকা। তাই দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থাকেই৷ তবে নিজেকে বিভিন্ন কাজের মধ্যে ব্যস্ত রেখে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি মিলতে পারে খুব সহজেই। আমি তাই নিজেকে নানা কাজের মাঝে ব্যস্ত রাখছি৷ স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও পড়াশোনা তো আর থেমে নেই। তাই নিয়মিত পড়াশোনা করছি৷ আমার বন্ধুরা পড়াশোনা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। আমি তাই অনলাইন স্টাডি গ্রুপ তৈরি করেছি। সবাই মিলে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করি,একে অপরকে সাহায্য করি। আমি বন্ধুদের বাড়ির কাজ ও করতে দেই৷ সবাই আমার এ উদ্যোগ পছন্দ করেছে।আমি যতোটা পারি সবাইকে পড়াশোনার বিষয়ে সহায়তা করছি৷ আর পড়াশোনার পাশাপাশি নানান কাজে সময়গুলো কাটছে বেশ। কখনো উপন্যাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া, কখনো রঙ তুলি নিয়ে রঙের খেলায় মেতে ওঠা, কখনো বা হারমোনিয়াম টা নিয়ে সা রে গা মা গেয়ে ওঠা। নিজের চর্চার পাশাপাশি ছোটো বোনদেরও শিখাই।আর পরিবারের সবার সাথে গল্প আড্ডায় মেতে ওঠা তো আছেই। পরিবারের মানুষের সাথে সময় কাটানো, বিভিন্ন খাবার রান্না করে সবাইকে খাওয়ানোর মজাই আলাদা৷ আমি সবসময় নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করি৷ এই সময়ে আমি বেশ কিছু নতুন রান্নাও শিখেছি৷ সারাবছর তো মায়েদেরই রান্না করতে হয়, এই সময়ে মায়েদের তো রান্নাঘর থেকে ছুটি দেওয়াই যায়।
এভাবেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন লাজে সময়গুলো বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। তবে মনের প্রশান্তির জন্য যোগব্যায়ামের কথা না বললেই নয়৷ মনকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে যোগব্যায়ামের কোন তুলনাই হয় না। আমি এই কোয়ারেন্টাইন সময়ে বিভিন্ন যোগব্যায়াম শিখেছি,নিয়মিত চর্চাও করি। যেহেতু সারাক্ষণ ঘরেই থাকা হয়, তাই সবারই যোগব্যায়ামের চেষ্টা করা উচিত। মানসিক চাপ কমাতে এটা খুব উপকারি। তাছাড়াও সময়টাকে দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে লাগানো যেতে পারে। তাই এই সময়টাকে অলসভাবে না কাটিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর রাখছি। সারা পৃথিবীর মানুষের জন্যই এটা কঠিন সময়। আমরা সবাই এখন করোনা যোদ্ধা। কিন্তু দুশ্চিন্তা করে মানসিক চাপ বাড়িতে তো আর কোন লাভ হবেনা। তাই চিন্তিত নয়, সাবলীল হতে পারে। করোনা প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে৷ খারাপ সময় আসলে তবেই আমরা ভালো সময়ের গুরুত্ব বুঝতে পারি।সবার মতো আমিও তাই স্বপ্ন দেখি সেই নতুন দিনের, যেদিন আর থাকবেনা এই আতঙ্ক,থাকবেনা এই ভয়৷ সেদিন আর ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হবে না। তাই সেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে৷ যুদ্ধে জয়ী হতে গেলে যুদ্ধ তো করতেই হবে৷ তাই মনোবল হারানো যাবে না। আর আমরা হলাম তরুণ, আমরাই যদি ভেঙে পড়ি তবে কী করে চলবে? কবির ভাষায়,
“আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?”
তাই নিজেও ভালো থাকতে হবে, অন্যকেও ভালো রাখতে হবে।
Shatabdi Mondal
School & College
GB057