কোভিড-১৯ মহামারী ও মানসিক ইতিবাচকতা

কোভিড-১৯ মহামারী, বর্তমানে এক ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তার নাম। এর সাথে যেন জড়িয়ে আছে পৃথিবীর সব রকম খারাপ ধরণের সম্ভাবনা। কারণ, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা এখনও নিশ্চিতভাবে এই রোগটির সকল তথ্য বের করতে পারেননি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের ঊহানে করোনা রোগটির মহামারী রুপটি আবিষ্কারের পর থেকেই সারা বিশ্বে এটি খুবই আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও এবছরের মার্চের ৮ তারিখে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হয়। আর তারপর বাংলাদেশেও বিরাজ করছে আতঙ্ক।

আর এই ধরণের পরিস্থিতিতে নিজের মনোবল ভাবে ধরে রাখা আসলেই খুব কঠিন। মহামারী আসলে যা-তা বা অবহেলা করার কিছু নয়, কারণ কোন রোগ খুব অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেলে তখনই তাকে মহামারী বলে ঘোষণা করা হয়। তাই, যখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারী বলে চিহ্নিত করে দিল তখন স্বাভাবিক ভাবেই সবার মাঝে এক ধরণের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই ধরণের পরিস্থিতিতে যারা নিজের মনোবল ধরে রাখছে, নিজেকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে, আমি বলব তারাই আসল সাহসী।

আসলে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে খুব বেশী কিছু করতে হয় না বলেই আমি মনে করি, শুধুমাত্র সবকিছুকে ভালোভাবে গ্রহন করা শিখতে হবে।

  • প্রথমত, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার অনেক বেশী। তাই এত দুশ্চিন্তার কারণ এটিকে না বানালেও চলবে যে, করোনা হলেই মনে হয় মারা যেতে হবে।
  • দ্বিতীয়ত, অবশ্যই গুজবে কান দেওয়া যাবে না। কারণ, গুজব মানুষকে বিনা কারণে অন্যপথে চালিত করে বিপদের সৃষ্টি করে। যেমন ধরুনঃ গুজব হয়েছিল যে, আদা গরম করে পানি খেলে নাকি করোনা উপশম হয়। যার কারণে সবাই সেইদিন আদা কেনার চেষ্টা করছিল। আর এই সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আদার দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই যে কোন তথ্য দেখলেই তা বিশ্বাস করা যাবে না। যাচাই করে দেখতে হবে।
  • তৃতীয়ত, সবকিছুর আলোকিত বা ইতিবাচক দিকটি প্রথমে দেখতে হবে। ভালো সম্ভাবনার উপর জোর দিতে হবে। কখনই এটি ভাবা যাবে না যে, এক শতাংশ মৃত্যুর হার হলে সেখানে আমি থাকব। বরং ভাবতে হবে এক শতাংশ সুস্থতার হার থাকলে সেই এক শতাংশতেই আমি থাকব।
  • চতুর্থত, নিজেকে যতটা সম্ভব ভালো কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে হবে। লকডাউন আছে বলেই যে আমি কিছু করতে পারব না তা কিন্তু নয়। কোন কাজ না পেলে বাড়ির কাজগুলোই করা যেতে পারে। ভালো কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকলে দুশ্চিন্তা বা নেতিবাচক ধারণা মনের ভেতর আসে না।
  • পঞ্চমত, অবশ্যই একলা থাকা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে থাকতে হবে। একা থাকলে বিভিন্ন উদ্ভট চিন্তাভাবনা মাথায় আসে যা থেকে পরে ডিপ্রেশন বা অন্যরকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • ষষ্ঠত, নিজের মতামতগুলো অন্যকে বলতে হবে, নিজের ভাবনাগুলো অন্যের সাথে ভাগ করে নিতে হবে। এতে করে আমরা যদি কিছু ভুল জেনে থাকি বা কোন ভুল ধারণা আমাদের মধ্যে থেকে থাকে তা অন্য কেউ শুধরে দিতে পারবে। আর ঠিক ধারণা হলে অন্যকেউ উপকৃত হবে।
  • সপ্তমত, নিজেকে আত্মবিশ্বাসী রাখতে হবে। নিজের ভেতর ভালো গুনগুলো আনার চেষ্টা করতে হবে সবসময়। কখনও ভেঙ্গে পড়া যাবে না। নিজের উপর এমন বিশ্বাস রাখতে হবে যে কেউ যদি এই কাজটি পারে তাহলে সেটিই আমি।

এমনভাবে আমরা নিজেকে মনোবলকে সহজেই ইতিবাচক রাখতে পারি। এই মহামারীকালে একটু মানসিক চাপ পড়বেই, কিন্তু এর ভিতরেও নিজেকে ধরে রাখাটাই আসল চ্যালেঞ্জ। আর এই পরিস্থিতিতে উপরের আইডিয়াগুলোকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে অবশ্যই আমরা নিজেকে এই মহামারীকালেও ঠিক রাখতে পারব।

 

মোস্তাক বারী ফাহিম

University Category

GB015

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *