৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ হতে শুরু করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।তারপর আসতে আসতে শুরু হয় লক ডাউন। গৃহবন্দী হতে থাকে মানুষ।
দীর্ঘ লকডাউন, করোনার ভয়, চাকরি হারানো, বেতন কমে যাওয়া, পরিবার বা পাড়াপড়শির আক্রান্ত হওয়া, সামাজিক দূরত্ব, চার দেওয়ালের মধ্যে মূলত নিজেকে বন্দি রাখার প্রভাব ভালোভাবেই পড়েছে মানুষের মনে।ফলে সহজেই সবাই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।দুশ্চিন্তা ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে। দেখা দিচ্ছে উদ্বেগ সহ মানসিক নানা ধরনের সমস্যা।
এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা এবং কঠিন এই দুর্যোগকালীন সময়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তিগত দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলে আমি মনে করেছি।আমি নিজেও সেই ইতিবাচক মনোভাব পোষণের চেষ্টা করেছি।
গৃহবন্দী অবস্থায় থাকতে থাকতে আসতে আসতে জীবনের প্রতি বিরক্তি চলে এল,মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকি ।ঠিক এমন সময় চিন্তা করে দেখলাম একঘেঁয়ে জীবনে একটু ছন্দ ফিরালে কেমন হয়!বসে পড়ি কাগজ কলম নিয়ে।লেখালেখির অভ্যাস এক আধটু ছিল ছোটো থেকে।কিন্তু পড়ালেখা,টিউশন এসব করে আর লেখার সময় হয়ে উঠতো না।সেই পুরানো অভ্যাসের একটু যত্ন নিলে মন্দ কি!লিখতে থাকি লক ডাউনে আশেপাশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে “লকডাউন ডায়েরি”।ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপগুলো আয়োজন করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা।প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো ভিন্ন ভিন্ন।বুক ফটোগ্রাফি,কবিতা লিখন,করোনাকালীন গল্প লিখন,বুক রিভিউ লিখন,পত্র লিখনসহ এবং কুইজসহ আরও বিভিন্ন আয়োজন।এর ফলে আরও একটি অভ্যাস নতুন করে আবার গড়ে উঠে। সেটি হলো “বই পড়া”।দোকানপাট বন্ধ থাকায় কখনো বন্ধু কখনো ভাই–বোনদের থেকে নিয়ে শুরু করি বই পড়া আর রিভিউ লিখা বইয়ের উপর আর সেই বই নিয়ে তুলতে থাকি সুন্দর সুন্দর বইছবি।আসতে আসতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য এক ভুবনে।করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তা কিংবা গৃহবন্দী এই একঘেঁয়ে জীবন নিয়ে বিরক্তি কেটে যেতে থাকে।নিয়মিত করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বুলেটিন শুনতে শুনতে একটা সময় সত্যিই হতাশ হয়ে পড়ি।তাই নিজেই ঠিক করলাম এই বুলেটিন দেখা বন্ধ করে দিব এবং দিলাম।পত্র–পত্রিকা পড়তে গিয়ে শুধু চোখে পড়ছে করোনায় এই দেশে এত মৃত্যু,ঐ দেশে অত।ঠিক করলাম এসব খবর পড়া বাদ দিব।পড়তে থাকি সেসব খবর যেখানে কোনো আশার আলো দেখা যায়।যেমন–কোন দেশ টিকা আবিষ্কার নিয়ে কাজ করছে,কোন দেশ টিকা আবিষ্কারে সফলতা লাভ করছে ইত্যাদি।করোনাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয় টেলিভিশনে সেসব অনুষ্ঠানও দেখতে থাকি।পরিবারের সবাই মিলে সাধারণত এতটা সময় একসাথে কাটানো যায় না।তাই এই সময়টা পরিবারকেও সময় দিতে থাকি।কর্মহীন এই দুঃসময়ে সকলের মিলিত মনোভাব অনেক খারাপ চিন্তা দূর করতে থাকে।এভাবেই সমগ্র লক ডাউন অর্থাৎ কোভিড–১৯ মহামারীকালীন সময়ে আমি প্রথম প্রথম নেতিবাচক ধারণা পোষণ করলেও আসতে আসতে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।
Adity Chakraborty
University Category
GB030