একবারে শুরু থেকেই শুরু করি। চীনের উহানে যখন প্রথম করোনা ধরা পড়লো তখন ভাবতেও পারিনাই আমাদের এই সোনার দেশেও এর প্রভাব কিছুদিন পরে পড়তে যাচ্ছি। জানুয়ারির শুরু থেকেই আমার ইন্টার্ন শুরু হয়। জানুয়ারি মাস স্বাভাবিক নিয়মেই চলতে লাগলাম। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে এসে অন্যান্য দেশের খবরাখবর শুনতে লাগলাম। ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের পিকনিকের আয়োজন ছিল। আমাদের এমডি স্যার পিকনিকে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেশ দিলেন। তখনো আমার মাঝে উৎকণ্ঠা ছিল না। সেই মাসের শেষের দিকে করোনার ওয়েবসাইটে সম্পূর্ণভাবে খোজ নেওয়া শুরু করলাম কতজন আক্রান্ত হচ্ছে, পরিস্থিতি কি রকম। মার্চ মাসে তো অফিসিয়ালি বাংলাদেশে করোনার আক্রমণের ঘোষণা আসল। পরিস্থিতি অনুযায়ী সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল। ভার্সিটিও অফ হয়ে গেল। কোম্পানি ওয়ার্ক ফর হোমের ঘোষণা দিল। মার্চের ২০ তারিখ গ্রামের বাড়িতে রওনা দিলাম। আজও সেখানেই আছি। যাইহোক করোনা আসার পর কেউ সত্য কেউ মিথ্যে তথ্য দিতে লাগল। আমি আসলে এগুলোতে কানই দিতাম না।
করোনার ফলে যেটা দেখেছি প্রথম অবস্থায় মানুষ অস্বাভাবিক ভয় পেত। কিন্তু সত্যি বলতে আমার মাঝে আসলে কোন ভয়ই কাজ করতো না। আমি আমার মনোভাবকে সম্পূর্ণ পজিটিভ রেখেছি। কারণ আমি জানি বিপদের সময় পজিটিভ চিন্তাভাবনা মানুষের মনোবলকে বাড়িয়ে দেয় এবং বিপদ থেকে মুক্ত করে। আমার এই মনোভাবের পিছনে বেশ কয়েকটি যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। প্রথমত, আল্লাহর রহমতে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতাম। নামাজান্তে দুয়া করার চেষ্টা করতাম। আল্লাহর উপর আমার পরিপূর্ণ আস্থা ছিল আছে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমি মনে এই বিশ্বাস ছিল কিছুই হবে না। তাছাড়া করোনার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে হাত মুখ ধোয়ার কথা আসে। তাই শুধুমাত্র ওজু করলেই অনেকবার ই হাত মুখ ধোয়া হয়ে যায়। এই ব্যাপারটাও আমাকে চিন্তামুক্ত রাখত। আমি কিছু জিনিসে বিশ্বাসী। কাজের মধ্যে থাকলে মানুষের সময়ও কেটে যায় আবার অযথা চিন্তা থেকেও বাচায়। সেই হিসেবে আমার যেহেতু ইন্টার্ন চলছিল তাই পুরাদমে কাজ চলতো। তখন মনটা আসলেই হালকা লাগতো।
শুরুর দিকে দিনে কয়েকবার করোনার আক্রমনের খবর রাখতাম। এতে আমার মন খারাপ হতো। তাই চিন্তা ভাবনা করে খবর রাখা বন্ধ করে দিলাম। এতে দেখা গেল আমার অনেক সুবিধা হয়েছে। মনও আর কষ্ট পেতনা। করোনা নিয়ে আলোচনা কম করতাম। এতে মনোভাব চাঙ্গা থাকত। ঘনিষ্ঠ জনদের বোঝাতাম ভয় পাবার কোন কারণ নেই। আরেকটি জিনিস আমার মাথায় ছিল যে বাংলাদেশে করোনা মহামারীর পর্যায়ে পড়েনি। কাওরণ দৈনিক মারা যাওয়ার যে তথ্য সরকার প্রকাশ করতো এমনিতেই তারচেয়ে বেশি মানুষ দৈনিক মারা যায়। কাজেই ভয় পাবার কিছু ছিল না।
এটা ভাবতাম আল্লাহ হয়তো মানুষদের পরিক্ষা নিচ্ছেন। কাজেই ধর্মীয় বিধি নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আর একজন মুসলমান হিসেবে এটা বিশ্বাস করি মরতে একদিন হবেই করোনায় মরি আর যেভাবেই মরি। তাই করোনাকে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। আমি আমার স্বাভাবিক কাজকর্ম করার চেষ্টা করতাম। এভাবেই আমি করোনায় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত এই মনোভাব নিয়েই বেচে আছি।
Amran Hossain
University Category
GB065