করোনা পরবর্তী পেশাগত নিরাপত্তা-হীনতার মোকাবিলায় নিজেকে যেভাবে প্রস্তুত করছি

যে কোন দুর্যোগ কিংবা মহামারী যেমন প্রতিটি দেশের জন্য ক্ষতিকর। তেমনি এর প্রভাব প্রতিটি দেশ প্রতিটি জাতি এমনকি ব্যক্তিগত ভাবেও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সে আপনি যে কোন পেশার কাজই করেন না কেন। একজন দিন মজুর থেকে শুরু করে কর্পোরেট জগতের ১০ টা ৬ টা অফিস করা বস কিংবা ৯টা ৫টা অফিস করা সরকারী কর্মকর্তার উপরেও এর প্রভাব পড়ে। হয়তো কিছুটা কম বা কারো ক্ষেত্রে বেশি। কিন্তু মহামারীর জন্য পুরো দেশ কিংবা পৃথিবীর অর্থনীতির তারতম্যটা সবার উপরেই পড়ে। যার ফলে পেশাগত পেশাজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ দিন মজুররাও এর ভুক্তভোগী হতে পারে।

 

২০২০ সালের করোনা পরিস্থিতি এমনি একটি পীড়াদায়ক মহামারী। যার ফলে এরই মধ্যে অনেক পেশাজীবী হারিয়েছেন একমাত্র উপার্জনের উৎস চাকুরী কিংবা অর্থনৈতিক মন্দার কারণে লস দিচ্ছেন ব্যবসায়ে। তবে আজ হোক কাল হোক এটি এক সময় হয়তো ঠিক হয়ে উঠবে আবার। যে কোন বিপদ থেকেই কাটিয়ে উঠার জন্য সবারই কিছুনা কিছু নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। ব্যক্তিগত জীবন যেমন নিরাপদ করা উচিত তেমনি পেশাগত নিরাপত্তার দিকটাও ভেবে রাখা উচিত। চলুন তবে আজকের লেখায় জেনে নেওয়া যাক- “করোনা পরবর্তী পেশাগত নিরাপত্তা হীনতার মোকাবিলার ৫ টি প্রস্তুতি”

 

১। ফ্রিতে অনলাইন কোর্স করুন

করোনা পরবর্তী পেশাগত নিরাপত্তা হীনতার মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে। আর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেশির ভাগ অনলাইন কোর্স প্লাটফর্ম যেমন  গুগোল গ্যারেজ, কোর্সেরা, এলিসন, খান একাডেমী, ইউডেমি, শিক্ষক.কম, 10 মিনিট স্কুল এমনকি বাংলাদেশর সরকারী ভাবে মুক্ত-পাঠ নামে বিভিন্ন কোর্স চালু করেছে। মজার ব্যাপার হলও বেশির ভাগ কোর্সই করা যাচ্ছে বিনামূল্যে। তাই ঘরে বসে বা অবসরে এসব ফ্রি কোর্স করে নিজের জ্ঞান যেমন বাড়াতে পারেন। তেমনি করোনা পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলার জন্য নিজের সিভিতেও যোগ করার জন্য কিছু দক্ষতা বাড়াতে পারেন। যেগুলোর সাহায্যে পরিস্থিতি মোকাবেলার মত যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারেন।

২। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হন

লিংকে-ডিনের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো আজকাল বেশ পেশাগত ভাবে পরিচিতি পাচ্ছে। শুধু তাই নয় আপনার ফেসবুক, টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম, ইউটিউবও হতে পারে আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত কাজের পোর্টফলিও। সখের বসে কিছু করার মাধ্যমেও নিজের কাজ গুলো জানিয়ে দিতে পারেন সবাইকে। সেই সাথে এগুলো হতে পারে আপনার পরবর্তী কর্মসংস্থার কাছে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কেননা আজকাল অনেক মাল্টিনেশনাল কোম্পানি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে দেখে ব্যক্তি হিসেবে আপনি কেমন। তাই সিভির পাশাপাশি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারেন নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল। যাতে করে আপনার প্রোফাইল আপনার পরবর্তী বসের নজর কাটতে পারে।

৩। পেশাগত ইন্ডাস্ট্রির সাথে যোগাযোগ ধরে রাখুন

আপনি যে পেশায় আছেন তার সমজাতীয় পেশার লোকজনের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে নিন। কেননা কোথায় কখন কর্ম সংস্থানের সুযোগ হচ্ছে সেটি যাতে না হারিয়ে ফেলেন। একই ভাবে আজকাল পেপার পত্রিকায় কর্মসংস্থানের বিজ্ঞাপন কম দিয়ে পরিচিত জনদের মাধ্যমেও অনেক সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। এক দিকে যেমন মানুষ কাজ হারাচ্ছে অন্য দিকে নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। ফলে পেশাগত যোগাযোগ ধরে রাখার মাধ্যমে সহজেই এই সুযোগটি হাতছাড়া করবেন না আশা করি।

৪। উপার্জনের দ্বিতীয় উৎস খুঁজে বের করুন

খুব ভাল করে লক্ষ্য করে দেখবেন করোনা পরিস্থিতিতে সবাই ফেসবুক কিংবা অনলাইনে অর্থ উপার্জন বা কিছু করার দিকে ঝুঁকছে। নিজের হাতের বানানো কিছু থেকে শুরু করে যে কোন পণ্য ঘরে বসে ফেসবুক পেজ বা অনলাইন ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি করা আজকাল হাতের মুঠোয়। আজকের-ডিল, দারাজ, ই-ভ্যালি, বিক্রয়.কম, শপ আপ ই-কমার্স সাইট গুলোতে সহজেই যে কোন পণ্য কেনা বেচা করা যাচ্ছে ঘরে বসেই। তাই চাকুরীর পাশা পাশি এটি হতে পারে আপনার উপার্জনের দ্বিতীয় উৎস। যার ফলে একদিক খারাপ গেলেও অন্যদিকটা খুঁটি হয়ে দাড়াতে পারে করোনার মত মহামারী পরিস্থিতিতে। তাছাড়া আজকাল ফ্রিল্যান্সিং করার চাহিদাও বাড়ছে। যদি কোন কাজে নিজেকে দক্ষ মনে করেন অবসর সময়ে সেই কাজের ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমেও নিজের আয়টা বাড়িয়ে নিতে পারেন। সেটা হতে পারে কোডিং, সখের বসে লেখালেখি কিংবা ওয়েব ডিজাইনিং।

৫। জরুরী মুহূর্তের জন্য সঞ্চয় করুন

যে কোন জরুরী মুহূর্তের জন্য সঞ্চয় করা বেশী জরুরী। কেননা আপনি কিংবা আপনার পরিবারের যে কোন মুহূর্তেই অসুস্থ হতে পারেন। তাই দরকার পড়তে পারে জরুরী মুহূর্তের সঞ্চয়ের। তবে এই পরিস্থিতিতে সত্যিই আয় বাড়ানোটা কিছুটা কঠিন। যার জন্য আয় বুঝে ব্যয় করাটা বুদ্ধিমানের কাজ। তাই করোনা পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব ব্যয়টা কমানো দরকার। যাতে করে অতিরিক্ত ব্যয়ের অর্থটাই হতে পারে আপনার জরুরী মুহূর্তের সঞ্চয়। আমাদের আয়ের বেশীর ভাগই চলে যায় বাসা ভাড়া বা বাসস্থানের জন্য। তাই কিছুটা কষ্ট হলেও ছোট বাসায় থাকতে পারেন কিছুদিন। অথবা মাসের দৈনন্দিন বাজার একসাথে কিনেও খরচ কিছুটা বাঁচাতে পারেন জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য।

 

দিনশেষে, করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠা সবার জন্য হয়তো সমান হবে না। তবে জীবন ধারণের চমৎকার একটি রুটিন আপনার জীবন যুদ্ধটাকে কিছুটা হলেও সহজ করে দিতে পারে। তবে সব কিছুই রুটিন বা বাঁধা ধরা নিয়মে করতেই হবে তা নয়। সব নিয়মেরই কিছুটা ব্যতিক্রম থাকে। তাই ব্যতিক্রম কিছু করলেও আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত নিরাপত্তার দিকটা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই ভবিষ্যৎটা নিরাপদ করতে পারেন। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ্‌ তালা হয়তো পরীক্ষা দিয়ে সবাইকে যাচাই করছেন। তাঁর রহমতে হয়তো সব ঠিক হয়েও যাবে আগের মত। আর তার জন্য আমাদের অধীর আগ্রহে ধৈর্য ধারণ করাটাই জরুরী। বিপদ তো সবার জন্যেই বিপদ। তাই আশা করছি নিয়ম করে বা নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত নিরাপত্তার দিকটা নিশ্চিত করতে পারবো সবাই। আপনি কিভাবে করোনা পরবর্তী পেশাগত নিরাপত্তা হীনতার মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত করছেন সেটিও আমাদের জানাতে পারেন।

MD Imtiaz
Professional Category
GB086

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *