করোনাকাল। এক অদ্ভুত সময়। এক অন্যরকম সময়। যে সময়ের কথা শুধু আমি বা আমরা নই,কল্পনা করতে পারেনি গোটা পৃথিবীবাসী। অথচ এখন আমরা তার মাঝেই করছি বসবাস। বদলে যাওয়া সময়,বদলে যাওয়া জীবনের সাথে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছি অনেকেই। প্রতিদিন অজস্র মৃত্যুর খবরে আমরা ভেঙে পড়ছি মানসিক ভাবে। কেউ জানিনা এর শেষ কোথায়। তবুও থেমে থাকেনা জীবন। এগিয়ে চলে তার নিজস্ব গতিতে। আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি এক গন্তব্যহীন পথের দিকে। জানিনা পথের প্রান্তে পৌঁছুতে পৌঁছুতে আমাদের সঙ্গী হবে আরো কত লাশের মিছিল। প্রাচীন পৃথিবীর বিভিন্ন মহামারি এবং তার রোমহর্ষক বর্ণনা কমবেশি আমরা সবাই জানি। আমাদের উপমহাদেশও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহামারির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু আজকের পৃথিবী এত উন্নত জ্ঞান বিজ্ঞানের ডালি নিয়েও নিরুপায় হয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাসের পায়ের কাছে। করোনাকালে শরীরের খেয়াল রাখার নানান যজ্ঞে আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা। নানা দুঃসংবাদের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অন্তরের কোমলতাগুলো সেখানে স্থান করে নিচ্ছে ভয়,হতাশা,হাহাকার এবং প্রিয়জন হারানোর বেদনা। আজ হয়তো বাংলাদেশে খুব কম পরিবারই আছে, যাদেরকে এখনো করোনাভাইরাস স্পর্শ করেনি তার বিষময় থাবা দিয়ে। হয় শারীরিক মৃত্যু এসেছে,অখবা করোনা গোটা পরিবারকে পঙ্গু করেছে অর্থনৈতিক ভাবে। আমি একজন সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুবাদে অলস সময় কাটাচ্ছি বাড়িতে বসে। রোজ খবরে একটা সংখ্যা দেখতে পাই, যে সংখ্যাটা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। ৩০,৩৬,৩৮,৪৫,৫৬….এক অনির্দিষ্ট সংখ্যা প্রতিদিন আমাদের জানিয়ে দেয় আজ কতজন নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ ছেড়ে গেল এই পৃথিবী, করোনার আঘাভে। যেদিন এ আঘাতটা প্রথম আমার পরিবারে লাগলো ,কাছের একজন মানুষ যখন বিনা নোটিশে ছেড়ে গেল আমাদের, তখন বুঝলাম,টেলিভিশনে দেখানো সংখ্যাটা নিছক কোনো সংখ্যা নয়। ওটা একটা আর্তনাদ। ওটা। হাহাকার। অনির্দিষ্ট সংখ্যক পরিবারের এক বাধ্য হাহাকার। করোনাভাইরাসের মত সে হাহাকারেরও কোনো ওষুধ এখনো কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। এই মহাসংকটে মন ভালো রাখা, মনকে ভালো কিছুর জন্য আশান্বিত রাখা কষ্টকের হলেও তা আমরা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। মন থেকে সমস্ত দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে সেখানে নতুন আশার আলো জ্বালানো এসময়ের জন্য খুবই প্রয়োজন। আমি খুব ছুটিপ্রিয় মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে যে হোস্টেল জীবন,বাড়ি থেকে দূরে থাকা,এগুলোর মাঝে আমাকে ভালো রাখতো কবে ছুটি হবে,কবে বাড়ি যাবো এই চিন্তা। জীবনে করোনায় লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রথম বুঝতে পারলাম সব ছুটি শুধু নির্ভেজাল আনন্দ বয়ে আনেনা। প্রথম প্রথম এক দমবন্ধকর অনুভূতি হতো। একটানা ঘরে বসে থাকতে যে বহু আগেই অনভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। খবর দেখলে এক অন্যরকম টেনশন,অদ্ভুত অনিশ্চয়তা। বাইরে যাওয়া বন্ধ, গেলেও এক সন্ত্রস্ত ভাব– কোথাও যেন হাত না লাগে,কারো বেশি কাছাকাছি চলে আসিনি তো ! কী এক অদ্ভুত পরিস্থিতি! আস্তে আস্তে চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করতে শুরু করলাম। নেতিবাচক সব কিছু বাদ দিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করতে লাগলাম।আমি প্রচণ্ড অদৃষ্টবাদী। সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ ছাড়া কিছু হয়না এটাও মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। প্রার্থনা এমন একটা জিনিস যা প্রচণ্ড সাহায্য করে আমাকে, নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেঁচে থাকতে।
পছন্দের কাজ করা যেমন বই পড়া,কবিতা লেখা -এসবের মাঝে ডুবে থেকে মাঝেমাঝে ভুলে যেতে চাই কোন দুঃসহ সময় আমরা পার করছি। মানসিক স্বাস্থ্যে সুন্দর রাখাটা আমি অবশ্য কর্তব্য বলেই মনে করি। কেননা হাজার হাজার মৃত্যুর খবরে আমি যদি হতাশ হয়ে পড়ি,হতাশাটা আমার কোনো ভালো কাজে আসবে না,বরং তা আমার বেদনাকেই বাড়িয়ে তুলবে। কিন্তু সেসব সরিয়ে যদি ইতিবাচক চিন্তায় মনকে ডোবাতে পারি,নিজেকে ও নিজের পরিবারকে মানসিক সাহস জোগাতে পারি,তাহলে অন্তত এ দুঃসময়কে কিছুটা হলেও সহনীয় করে তোলা যাবে বলে আমি মনে করি। তাই নিয়ত সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি, ভালো থাকার,ভালো রাখার।জানি এ দুঃসময় কেটে আশার আলো আসবেই। প্রয়োজন শুধু একটু ধৈৰ্য্য এবং অনেকখানি সাহসের।
Mahbuba Monjur Mim
University Student
GB082