মৃত্যু মিছিল রোজ পথে হেঁটে যায়
বেঁচে থাকাটাই আজ হয়ে গেছে দায়
তবুও তো আজ বাঁচবার ময়দানে
পাখি ডেকে যায় শিস দিয়ে …”
কল্পনার বাইরের এক অদৃশ্য শত্রুর জন্য পুরো পৃথিবী আজ থমকে , চারদিকে শুধুই নিস্তব্ধতার হাতছানি । যান থাকলেও তার বাহক নেই , রাস্তা থাকলেও নেই তার পথিক । সড়কগুলো আজ অ্যাম্বুলেন্স আর বিষণ্ণ সাইরেনের দখলে । কোলাহলপূর্ণ জনসমাগমে আজ শূন্যতার হাহাকার । বিশ্বজুড়ে এখন কালোশক্তি করোনার সাম্রাজ্য । দেশ, জায়গা , লিঙ্গ , গোত্র , ক্ষমতাধর কারও এন্ট্রি নেই ক্ষমা পাওয়ার । এ যেন এক অদম্য অপশক্তির ছোবল। করোনা ভাইরাস ভাইরাসের একটি শ্রেণী যা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে থাকে । মানুষের মধ্যে এটি শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়। সর্বশেষ ২০১৯ সাল চীনে পাওয়া যায় এসএআরএস-সিওভি-২’ , যা নোভেল করোনাভাইরাস নামেই পরিচিত। ।এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ২০৪টিরও বেশি দেশ ও অধীনস্থ অঞ্চলে ২৪ লক্ষের ও বেশি ব্যক্তি করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।এদেশে বৈশ্বিক মহামারীটির প্রথম সংক্রমণ ঘটে ৮ই মার্চ ২০২০ সালে।তারপর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে তা বাড়ছে। হাঁচি ও কাশির শিষ্টাচার না মানলে এর মাধ্যমে সৃষ্ট পানিকণার ফলে আক্রান্তর সংস্পর্শে অপর ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলোঃ জ্বর,অবসাদ,শুষ্ক কাশি,বমি হওয়া,শ্বাসকষ্ট,গলা ব্যাথা,অঙ্গ বিকল হওয়া,মাথা ব্যাথা,পেটের সমস্যা
কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপরোক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকেনা । আবার নিয়মিত মিউটেশন করার জন্য এর লক্ষণ অনেক সময় পরিবর্তন হয়ে থাকে।করোনায় প্রতিকার এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসেবে ৩ টি কৌশলের কথা বলেছেন। ১. টিকা দেয়া। অথবা, ২. স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৩. স্থায়ীভাবে মানুষের অভ্যাস ও সামাজিক আচার-আচরনে পরিবর্তন আনা। সচেতনতাই এখন বেঁচে থাকার প্রধান লক্ষ্য। এজন্য মানতে হবে-
হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্তকরণঃ কখন হাত ধুতে হবে, সেটা জানার জন্য নিচের নির্দেশনাগুলি মনে রাখা জরুরি:
- নাক ঝাড়ার পরে, কাশি বা হাঁচি দেবার পরে হাত ধুতে হবে।
- যেকোনও জনসমাগমস্থল যার মধ্যে গণপরিবহন, বাজার কিংবা উপাসনাকেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত, সেগুলিতে পরিদর্শন করার পরেই হাত ধুতে হবে।
- বাসা থেকে কর্মস্থলে পৌঁছাবার পর হাত ধুতে হবে।
- কর্মস্থল থেকে বাসায় পৌঁছাবার পর হাত ধুতে হবে।
- ঘরের বাইরের যেকোনও বস্তুর পৃষ্ঠতল হাত দিয়ে স্পর্শ করার পরে হাত ধুতে হবে।
- যেকোনও রোগীর সেবা করার আগে, সেবা করার সময়ে বা তার পরে হাত ধুতে হবে।
- খাবার আগে ও পরে হাত ধুতে হবে।
- শৌচকার্য করার পরে হাত ধুতে হবে।
- বর্জ্যপদার্থ ধরার পরে হাত ধুতে হবে।
- পোষা প্রাণী বা অন্য যে কোনও প্রাণীকে স্পর্শ করার পরে হাত ধুতে হবে।
- হাত যদি দেখতে নোংরা মনে হয়, তাহলে সাথে সাথে হাত ধুতে হবে।
- শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব( ন্যূনতম ৬ ফুট)
করোনায় হৃদয়স্পর্শী ঘটনা এখন নিত্যকার রুটিনে পরিণত হয়েছে। পথে ঘাটে ছুটছে বহু মৃত্যুমিছিল। হৃদয়কাতর এসকল মৃত্যু কারোর ই কাম্য নয়। মৃত্যুর পরেও রোগীর দেহ থেকে এ মহামারি ভাইরাস ছড়াতে পারে এ সংশয়ে মানুষ আজ মানবতা হারিয়ে ফেলেছে, হারিয়ে ফেলেছে মনুষ্যত্ববোধ। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বা হতে পারে এ সন্দেহে মানুষেরা তাদের কাছের মানুষগুলোকেই দূরে ঠেলে দিচ্ছে, আপনকে করে দিচ্ছে পর! এগুলো সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত ও হৃদয়বিদারক।
মহামারি করোনার এ সংকটকালে নিজেদেরকে সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে হবে। রুটিনের বিষয়গুলো, যেমন ঘুম, ঠিক সময়ে খাওয়া, বাড়িতে হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি বন্ধ করা যাবে না। সুষম আর নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলতে হবে , সময়মতো ঘুমাতে হবে এবং অবশ্যই নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ধূমপান, মদ্য পান বা নেশা এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘরোয়া খেলা খেলা যেতে পারে ।শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও সবার খোঁজ রাখা উচিত। প্রায় আবদ্ধ শহরে বিচ্ছিন্নতার জন্য অসহায় লাগতে পারে। তাই বন্ধু আর স্বজনদের সঙ্গে ই-মেইল, টেলিফোন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রাখা উচিত। পরস্পরের খোঁজ রাখা উচিত। করোনা–সংক্রান্ত কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে কীভাবে, কার কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য সাহায্য গ্রহণ করবো, তার একটি আগাম পরিকল্পনা তৈরি করে রাখা উচিত। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্যকারী এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত তথ্যগুলো নিজেদের জানতে হবে আর পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন।
করোনায় এ সংকটকালে আমাদের মনে রাখতে হবে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক বস্তুটি হলো আমাদের সুস্বাস্হ্য বজায় রাখা। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি আমরা ঘরের ভেতরে কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করি। সময় কাটানোর জন্য আমরা বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গায় অথবা ছাদে শাকসবজির বাগান করি। এতে আমাদের মনও ভালো থাকে। বর্তমানে অনলাইনে বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, কুইজ ছাড়াও বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের চর্চা চলছে। এগুলোতে অংশ নিয়ে আমরা আত্মিক উন্নয়ন সাধন করে থাকি।
সময় এসেছে সতর্ক হওয়ার নিজেদের কল্যাণের জন্য , কাছের লোকদের কল্যানের জন্য। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে থাকতে হবে ঘরে । প্রয়োজন ছাড়া বেরোনো যাবে না তবে আতংকিত হওয়া যাবে না। গুজবে কান দেয়া যাবে না । সাবধানতার সাথে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
“আবার দেখা হবে এখনি শেষ দেখা নয়
আবার কথা হবে এখনি শেষ কথা নয় । “
Mahmuda Yasmin
School & College Category
GB012