কোভিড -১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ লকডাউনে ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে।আমিও তার ব্যতিক্রম নই।সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মাত্র ২মাস ক্লাস করি।তারপরেই করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয় ১০দিনের জন্য।১৭ই মার্চ চলে আসি বাড়িতে।দিন যত যায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি তত অস্বাভাবিক হতে থাকে,ছুটিও বাড়তে থাকে মাসের পর মাস।দেশব্যাপী করোনা আক্রান্তের হার,মৃত্যু..বিশেষ করে বাড়ির আশেপাশের পরিচিতজনের করোনায় আক্রান্তের,মৃত্যুর খবর শুনে মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই করোনাকালে সুস্থ মনমানসিকতা/ইতিবাচক মনোভাব ছাড়া যে বেচে থাকাটাই কঠিন।এক্ষেত্রে ইতিবাচক মানুষদের সাথে সখ্যতাই অনেক বড় উপায়। পারিবারিক দৃঢ় বন্ধন,পরিবারের সাথে সময় কাটানো,আত্নীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে অনেকটা ভাল থাকা যায়।আর আমিও তাই করেছি।ব্যস্ততা আর দূরত্বে থেকে যেসব আত্নীয়স্বজনদের সাথে অনেকদিন দেখা-সাক্ষাৎ নেই, এই সময়ে কাছে থেকে দূরের সবার সাথে অন্তত ১বার করে ভিডিওকল এ দেখে কথা বলেছি।
আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে সবার সুস্থতা ও সুস্থ সুন্দর পৃথিবীর কামনা তো প্রতিদিনই করছি। কোয়ারেন্টিন এর প্রথম দিকে,মার্চ-এপ্রিল মাসে ঘুমের তো কোন রুটিন ই ছিলনা।করোনার বন্ধে অসম্ভব ঘুমে অসুস্থ হহয়পড়ার আগেই ঘুমে সীমাবদ্ধতা এনেছি।
আর কোভিড-১৯ এ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় বেশি নজর দেয়া হয়েছে।বাড়ির কাজ নিজেরা মিলে করার আনন্দ উপভােগ করতে পেরেছি।তারপর বিভিন্ন শিক্ষণীয় জিনিস যা ইন্টারনেট বা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পারি,সেগুলোর মধ্য থেকে পছন্দের জিনিস গুলো শিখতে চেষ্টা করেছি।মায়ের থেকে বিভিন্ন রান্না শিখেছি। কোভিড-১৯ এর দিনগুলোতে আমার ডায়েরি লেখা হয়েছে প্রায় নিয়মিত। আর সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে আমার কোয়ারেন্টিনে সবচেয়ে বড় সঙ্গী আমার ছোট ভাই, যার দুষ্টুমি,খেলাধুলায় দিনগুলি যে কিভাবে কেটেছে টের পাইনি। মনমরা,বিষন্নতা আমায় ছুতেও পারেনি। করোনা মহামারির আগে কখনোই এমন অনির্দিষ্ট দিনের ছুটি পাইনিতো । বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া ১০দিনের ছুটি বাড়তে বাড়তে আজ ১৭সেপ্টেম্বর ৬মাস পূর্ণ হলো।আর সাথে সাথে পড়াশোনায় অনিয়মিত হওয়ারও ৬ মাসপূর্ণ হলো আমার।
যদিও এরই মাঝে শুরু হয়েছে আমাদের অনলাইন ক্লাস।যা একেবারেই পড়াশোনাবিচ্যুত অবস্থা থেকে কিছুটা বইমুখি করেছে। সর্বোপরি অনলাইন ক্লাসে-সীমিত সময়ে পড়াশোনায় যুক্ত থেকে, পরিবার-আত্নীয় স্বজন-বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলে, ধর্মীয় প্রার্থনায় মনোনিবেশ করে,ঘুমে সীমাবদ্ধতা এনে,বাড়ির কাজে সাহায্য করে,পছন্দের জিনিস শিখে-এসব মিলিয়ে ব্যস্ত থেকে বিষন্নতা,নিঃসঙ্গতা থেকে দূরে থাকতে পেরেছি।করোনায় যেখানে প্রাণে বেঁচে থাকাই বড় দায় আর সেখানে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এই করোনা মহামারীতে সুস্থভাবে এখনো বেঁচে আছি আলহামদুলিল্লাহ।
Afifa Binte Abdul Mannan
University Student
GB120