করোনাকালীন সংকট ও ইতিবাচক মনোভাব

কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাস মহামারির প্রভাবে আমাদের সামগ্রিক জীবন আজ এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা – এসব যেন আমাদের সকলের জন্যই নতুন বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ১১ ই মার্চ কোভিড-১৯ এর এ পরিস্থিতিকে ঘোষণা করেছে প্যান্ডেমিক হিসেবে। করোনার কৃষ্ণ মেঘের ছায়ায় আজ বিপর্যস্ত আমাদের জনজীবন। তবে তার মাঝেও একটুখানি সুযোগ মিলেছে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার। যেমনঃ

১) লকডাউনের ফলে আমরা ঘরের চার দেয়ালে আটকা পড়ে আছি। এতে পারিবারিক বন্ধন হয়েছে আরো দৃঢ়। করোনা প্রেক্ষিতে মা-বাবার ভঙ্গুরতার কারণে তাঁদের প্রতি অনেক বেশি যত্নবান হওয়া, ভাই- বোনদেরকে নতুন করে চিনতে পারা মায়াময়ী চোখে শিশুদেরকে দেখা; জীবনের ব্যস্ততাকে বিরতি দিয়ে পারিবারিক জীবনকে যেন নতুন চোখে দেখবার সুযোগ হয়েছে। শিশুদের সঙ্গে খেলা করা, গল্প করা, পরিবারের নানান সদস্যদের সঙ্গে, ঘর-বাড়ির আশপাশটাও নতুন করে দেখবার সুযোগ করে দিয়েছে এই কোভিড ১৯।

২) লকডাউনে আটকা পড়ে অন্তত কিছু ব্যাপারে আমাদের নতুন করে অনুভূতির সঞ্চার হয়েছে। যেমনঃ ঘরের ভেতর পরিবারের মেয়েরা কি পরিমান কাজ করে থাকে। ঘরের কাজে যারা আমাদের সাহায্যকারী, আমাদের যাপিত জীবনের চাকা সচল রাখতে তাঁদের ভূমিকা যে কত মহান!

৩) করোনার ধূসর শামিয়ানার প্রভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলেই আমরা একে অপরের খোঁজ খবর নিচ্ছি। খবর ও তথ্যের আদান-প্রদান করছি এবং নানা বিষয়ে নানান মানুষকে সাবধানও করার সু্যোগ হয়েছে । এমন সৌহার্দ্য, হৃদ্যতা, মৈত্রী, সংবেদনশীলতা ক’দিন আগেও ছিল না। তাই বলা চলে, করোনা সঙ্কট ও আতঙ্ক পরোক্ষভাবে আমাদের সামাজিক মৈত্রী, প্রীতি ও বন্ধনকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

৪) করোনার প্রভাবে বদলে গেছে পৃথিবীর পরিবেশ; সর্বংসহা পরিবেশ একটু হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাসে প্রানবন্ত হবার সুযোগ পেয়েছে। বেলজিয়ামের রয়েল অব অবজারভেটরির বিজ্ঞানীদের মতে, লক ডাউনের ফলে পৃথিবীর উপর চাপ কমে গেছে অনেক বেশি।পৃথিবী কাপছে কম।দূষণহীন পৃথিবীর আকাশ হয়েছে আগের চেয়েও দশ শতাংশ বেশি অন্ধকার।ফলে তারার উজ্জ্বল্য বেড়েছে চল্লিশ শতাংশ। আগের দূষিত আকাশ থেকে যেখানে ভেনাস দেখা যেতো না,   এখন সেখান থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ভেনাস তথা শুকতারা।

২০০২ সালে প্রথম বাংলাদেশে গোলাপি ডলফিনের অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিল ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি।এরপর ২০১১ সালে বঙ্গোপসাগরে একবার এবং ২০১৮ সালে সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে আরেকবার গোলাপি ডলফিনের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। এবার ২৩ মার্চ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টের কাছে আবারও দেখা মিলেছে সেই গোলাপি ডলফিনের।

কোপারনিকাস অ্যাটমসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস এবং কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস এর তথ্য মতে, বরফে আচ্ছাদিত উত্তর মেরুর আকাশে ওজন স্তরের ১০ লাখ বর্গ কিলোমিটারের যে বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি নিজ থেকেই সেরে উঠেছে।কারন হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীর শিল্পায়নের চাকা স্থবির হয়ে পড়ায় পৃথিবীর পরিবেশ প্রকৃতি যে বিশ্রামের সুযোগ পেলো, তারই ফলে এই ওজন স্তরের গর্ত ভরাট হয়েছে।

সবশেষে বলতে চাই, কেটে যাবে করোনার মেঘ, পৃথিবীর আকাশে উদিত হবে হাসিমাখা সূর্যের। বিলুপ্ত হবে করোনা, আবার সুস্থ হয়ে উঠবে পৃথিবী। বহু মৃত্যু, বহু ক্ষতি এবং বহু দুঃস্বপ্নের স্মৃতি পেরিয়ে একদিন অবশ্যই কেটে যাবে ধূসর এই শামিয়ানা। তাই করোনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সুন্দর হয়ে উঠুক আমাদের ভবিষ্যৎ, এই আমাদের প্রত্যাশা।

Fahad Hossain Fahim

University Category

GB034

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *