আক্ষরিক অর্থে, নিজেকে জনসম্মুখে তুলে ধরার মত কিছু করার ক্ষেত্রে এই মহামারীর সময়ে আমার স্বশরীরে ভূমিকা খুবই নগন্য মাত্রায় ছিল। তা সত্ত্বেও, চেষ্টা করেছি মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে কীভাবে ইতিবাচকতার দিকে সর্বোপরি ধাবিত থাকা যায়। সেই অরেক্ষিতেই কিছু দিক তুলে ধরার চেষ্টা করছিঃ
১. প্রথমত, যেহেতু আমি এই সময়ে হাতে অফুরন্ত অবসর হাতে পেয়েছিলাম, তাই একজন বইপাগল কিংবা সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে আমি একদম শুরুর দিক থেকেই বই পড়ছিলাম এবং এখনও সেই চর্চা অব্যাহত আছে। যদিও এই ছুটির বা জটিল মুহূর্তগুলোর ব্যাপ্তিকাল সম্পর্কে শুরুর দিকে আমার কোন ধারণাই ছিল না। তথাপি, আমি জমে থাকা বই, পিডিএফ এবং নিজের জমানো টাকা খরচ করেও বই কিনে মনকে প্রফুল্ল রেখে সময় কাটাচ্ছিলাম এবং বাড়িতে আবদ্ধ থাকার তিক্ততা থেকে বের হতে পেরেছিলাম।
এছাড়াও, আমি চিন্তা করেছিলাম, আমার ভেতরে যে স্পৃহা এবং কাজের আগ্রহ আছে সেগুলোকে কিভাবে এই সময়ের প্রয়োজনে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে কাজে লাগানো যায়। এর ফলে পরবর্তীতে আমি করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক শিক্ষাচিন্তা, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও ঘুরে ইত্যাদি সম্পৃক্ত বেশকিছু আর্টিকেল ও পেপার সাবমিশন করেছিলাম, যার ফলে আমার কিছু ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর উপর এর প্রভাব পড়েছিল। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগে এই মহামারীর জটিলতাকে মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন ওয়েবিনার এর আয়োজন করেছিলাম যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল করোনা সংকটে শিক্ষাব্যবস্থা, জব মার্কেটে এর প্রভাব, প্রতিকার এবং প্রস্তুতি। আর এই ওয়েবিনারগুলোতে আইডিয়া শেয়ারিং, গেস্ট ইনভাইট এবং প্রোগ্রাম অরগানাইজিং সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো কাজ আমি চেষ্টা করেছি যতদূর সম্ভব দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করতে।
২. অর্থনৈতিকভাবে ব্যয় করে মানুষের মুখে নির্মল হাসি ফোটানো একটি আনন্দের কাজ। যদিও এমনটি করার মত এই মুহূর্তে খুব বেশি শক্ত অবস্থান আমার তৈরিই হয়ে ওঠেনি। কিন্তু একটি গ্রুপের সাহচর্যে আয়োজিত অনলাইন ম্যাগাজিনে আমি লেখা পাঠিয়েছিলাম যেখানে লেখা পাঠানো শর্ত ছিল সামান্য কিছু টাকায় রেজিস্ট্রেশন আর লেখা থেকে প্রাপ্ত পুরো টাকাটিই বন্যাদুর্গত ও করোনায় আর্থিক বিপর্যস্ত বা দিন আনে দিন খায় মানুষদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল।
এছাড়াও লেখালেখি করা আমার আবেগের অংশ। আর তাই এই সময়টায় আমি বিভিন্নভাবে লেখালেখি করে মন উৎফুল্ল করার পাশাপাশি নিজেকেও ব্যস্ত রেখেছি।
৩. অনলাইন শপিং এর বিষয়টা এই লকডাউনে আমার মধ্যে অনেক বেশি কাজ করেছে। নিজের জমানো কিছু টাকা বা হাতে কিছু টাকা পেলে সেটা দিয়ে মেকাপের জিনিস, বই, ড্রেস, পরিবারের সবার জন্য খাবার ইত্যাদি কিনে এক মুহূর্তের জন্য হলেও নিজেকে আনন্দ দিতাম এবং সেটা এখনও করি।
ঈদুল আজহার ঠিক একদিন আগেই আমার বড় আপুর বাবুর প্রথম জন্মদিন ছিল। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে মাসের শেষে একই সাথে বড় দুটো উৎসব (ঈদ + জন্মদিন) আয়োজন করাটা খুব সহজসাধ্য নয়। সেক্ষেত্রে আমি আর আমার ছোটবোন মিলে জন্মদিনের আয়োজনের পুরো দায়িত্বটা নিয়েছিলাম যেন স্বল্প খরচে জন্মদিনের আনন্দটিও আমরা উৎসবমুখর ভাবেই পালন করতে পারি এবং সেটি করাও সম্ভব হয়েছিল।
সত্যিকার অর্থে এই কাজ বা দৃষ্টিভঙ্গিগুলো অনেকের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও, এই ছোট ছোট কাজগুলোই আসলে আমার দ্বারা করা সম্ভব হয়েছে এবং এগুলোকেই আমি আমার কোভিড– ১৯ মহামারীর মাঝে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার প্রেক্ষাপট থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। আমার মতে, ভাল থাকাটা প্রতিটি মানুষের মনের ইতিবাচকতা এবং স্বকীয়তার ব্যাপার। আর তাই, আমিও আমার মত করেই এই সময়টায় যতটুকু পারি, ভাল থাকার চেষ্টা করেছি এবং করছি।
Nawrin Sultana Luna
University Category
GB001