২০২০ সাল – মহামারী করোনার প্রভাবে এই বিশ যেন বিষের অনুভূতি এনে দিচ্ছে। সারাবিশ্ব যখন কোভিড ১৯ এর ভয়াল থাবায় কম্পমান, ঠিক সেই মুহুর্তে বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা নেহাতই অগ্নিপরীক্ষার সামিল। সংবাদমাধ্যম গুলোতে যখন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা চোখে পড়ে, সেই সময়ে দুশ্চিন্তার পাহাড় যেন মাথায় চেপে বসে। এমতবস্থায় মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটা সত্যিই কঠিন ব্যাপার।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে করোনা কালীন সময়ে বিশ্বের প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন। আর এই মনোরোগের কারনে দিন দিন মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়েছে। অনেকেই বলেন যে, যারা মনোরোগে ভোগেন, তারা পিঠে একটা বাড়তি বোঝা বহন করেন। তাই এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখা একান্ত জরুরী।
কথায় আছে, আপনি ঠান্ডা, তো জগত ঠান্ডা। অর্থাৎ করোনা কালীন সময়ে যদি আমি নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে পারি তাহলে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থা কঠিন হলেও আমি মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারবো। তাই এই সংকটময় মুহূর্তেও আমি নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছি।
প্রথমত, নিজেকে এটা বোঝাতে হবে যে, সমস্যা যেহেতু আছে, সেহেতু এর সমাধানও নিশ্চয়ই আছে। তাই সমস্যা দেখে আগেই আতংকিত হওয়া যাবে না। বিপদের সময় ধৈর্য ধারন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অযথা চিন্তা করে নিজেকে চাপের মধ্যে রাখলে কোন সমাধান আসবে না। বরং মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তাই নিজেকে যতটা সম্ভব মানসিক চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, অভ্যাসের পরিবর্তন। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে নিজের খেয়ালখুশি মতো চলাফেরা করেছি। কিন্তু করোনা কালীন সময়ে সেই অভ্যাসের পরিবর্তন করা একান্ত জরুরী। বাহিরে যাওয়ার পূর্বে মাস্ক পড়া, বাহিরে থাকাকালীন সময়ে বার বার হ্যান্ড-স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, বাহির থেকে বাসায় আসার পর সাবান বা হ্যান্ড-স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করা। সম্ভবপর হলে গোসল করা। করোনা পরিস্থিতির আগে বন্ধুদের সাথে দলবেধে ঘোরাঘুরি এবং আড্ডা দেওয়ার যে প্রবনতা ছিল তা পরিহার করা আবশ্যক। মোটকথা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আমি নিজেও আমার অভ্যাস পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়েছি।
তৃতীয়ত, মনোবলকে দৃঢ় করা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু দৃঢ় মনোবল ও কিছু নিয়মনীতির অনুসরন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শারিরীকভাবে অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও যারা দৃঢ় মনোবল ও কিছু নিয়মনীতি মেনে চলে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, তাদের ফিরে আসার গল্পগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। এতে করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীসহ সকলেই এই কঠিন সময়ে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার জন্য বাড়তি অনুপ্রেরনা পাবে। আমি নিজেও পত্র-পত্রিকায় করোনা ভাইরসা সম্পর্কিত সকল আপডেট নিয়মিত রাখার চেষ্টা করি।
২০২০ সালের পূর্বে পৃথিবীর মানুষ আরো অনেক মহামারী রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। অন্মোধ্যে ১৮১৭ সালে প্রথম কলেরা মহামারী, ১৮৫৫ সালে প্লেগ রোগের মহামারী, ১৮৮৯ সালে রাশিয়ান ফ্লু, স্প্যানিশ ফ্লু – ১৯১৮ সাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তখনকার সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এখনকার মতো এতটাও উন্নত ছিল না। তারপরও আমাদের প্রিয় এই পৃথিবী সকল বাধা কাটিয়ে উঠেছিল। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি পূর্বের তুলনায় অনেক উন্নত। তাই সকলের নিকট আমার অনুরোধ কেউ আতংকিত হবেন না। সচেতনতা বৃদ্ধি করুন, মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকুন, নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুন এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন। সর্বোপরি, অন্যের মাঝেও সচেতনতা জাগিয়ে তুলুন এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। এতে করে আপনি, আপনার পরিবার, সমাজ এবং দেশের সকলেই সুস্থ থাকবে।
Md. Omar Khoiyam Murad
University Category
GB094