বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এবং ভীতিজনক বিষয় হলো কোভিড-১৯ ভাইরাস যেটা সাধারণত করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। এই ভাইরাস ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছে মহামারীর এবং কেড়ে নিয়েছে লক্ষ মানুষের জীবন। চারিদিকের সকল সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে কিছুদিনের ভিতরেই। সকল মৌলিক চাহিদার কথা ভুলে গিয়ে সব কিছুর উর্ধ্বে মানুষ গুরুত্ব দিয়েছে জীবনের। মৃত্যুর মিছিল এবং স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস হয়ে যেতে দেখেও এখনো আমি ধরে রেখেছি নিজের ইতিবাচক মনোভাব। নেতিবাচক দিকের সাথে তুলনা করলে মহামারীর ইতিবাচক দিকগুলো হয়তো কিছুই নয় তবুও করোনা মোকাবেলায় বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ইতিবাচকতায় বেঁচে থাকার রসদ যোগান দিতে পারে আমাদের। প্রথম দিকে চারপাশে সবার আতঙ্ক এবং পৃথিবীব্যাপী মৃত্যু ঘাবড়ে দিলেও ধীরে ধীরে বেশ কিছু ইতিবাচকতা খুঁজে পাই আমি এসবের ভেতর। প্রথমত সকল মানুষ নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করায় এবং সব কল কারখানা বন্ধ থাকায় পৃথিবীতে দূষণ কমে গেছে উল্লেখযােগ্য হারে, বন্যপ্রাণীরা অনেকটা সময়ের জন্য ফিরে পেয়েছে নিজেদের স্বাধীনতা। দ্বিতীয়ত ব্যস্ততার শিকলে বাঁধা পড়া মানুষেরা বহুদিন পর সময় কাটাতে পেরেছে তাদের পরিবারের সাথে। তৃতীয়ত সকল পর্যায়ে বেড়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতা, মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সজাগ। আমি নিজে এসব ইতিবাচক বিষয়গুলো হতে অনুপ্রাণিত হয়েছি যা কিনা আমাকে সাহায্য করেছে এই ভয়ংকর কোভিড-১৯ মহামারীর মাঝেও নিজের ইতিবাচকতা ধরে রাখতে। মহামারী শুরু হবার পর পরই শুরু হয় দীর্ঘসময় ধরে লকডাউন যখন সকল কিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই সময়টা বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় যেহেতু সবাই বাড়িতে অবস্থান করছিলো সেহেতু পরিবারের সবার সাথে দারুণ কিছু মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ পেয়েছি আমি অনেকদিন পর। অন্য সময় ব্যস্ততার কারণে সবাইকে একইসাথে পাওয়ার সুযোগ হয়নি কখনো যেটা আজ সম্ভব হয়েছে মহামারীর কারণে এবং আমার জন্য এটাই ছিল নিজের ইতিবাচক মনােভাব ধরে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী। তাছাড়া এই সময়ে নিজের বিভিন্ন শখ, স্বপ্ন নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি যেটা অন্য সময় অনেক চাইলেও সময় হয়ে ওঠেনি। শখের রান্না করা, হস্তশিল্প বানানো ছাড়াও যেটা আমার জন্য সবচেয়ে বিশেষ ব্যাপার ছিল সেইটা হলো নতুন করে আবার লেখালেখিতে ফিরে আসা যেইটা অনেক দিন ধরেই চেয়েছিলাম আমি। অফুরন্ত অবসর থাকায় এই সময়টা আমি প্রচুর লেখালেখি করেছি আর এর মাধ্যমেই আমার পরিচয় হয়েছে অন্তর্জালের অনেক মানুষের সাথে যারা কিনা উৎসাহ যুগিয়েছে আমাকে সবসময়। তাদের সঙ্গ এবং উৎসাহ আমাকে সাহায্য করেছে এই দীর্ঘ মহামারীর সময়টা ইতিবাচকতার মধ্যে কাটানোর জন্য। নিজের সকল শখ পূরণ এবং পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটাবার মধ্য দিয়ে খুব সহজেই কোভিড-১৯ মহামারী অর্থাৎ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময়কালীন বন্দী সময়টা আমি যথাযথ ভাবে কাজে লাগিয়েছি। তাই সকল খারাপ এর মাঝেও আমি খুঁজে নিয়েছি ভালো কিছু যেটা আমাকে সাহায্য করেছে নিজের ইতিবাচক মনোভাবটা ধরে রাখার জন্য। এই সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিটা মানুষের মনে মৃত্যু ভয় ঢুকে গেলেও ইতিবাচকতার মোড়কে সেই ভয়টাকে আবৃত করে রাখতে সক্ষম হয়েছি আমি। জীবনের সব কিছুর ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব থাকলে অনেক জটিলতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস তাই সেই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে সকল ভয়কে জয় করে এরকম ভীতিকর অবস্থায় ও নিজের ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি আমি।
Farhana Rahman
University Category
GB032