“কোয়ারেন্টাইন“,, ল্যাটিন থেকে আসা শব্দটির পরিচয় বেশিরভাগ মানুষের কাছেই ২০২০ সালের প্রথম প্রহর থেকেই যেন খুবই পরিচিত হয়ে উঠেছে। সভ্যতার প্রত্যেক প্রারম্ভে বা কোনো এক অভাবিত মুহুর্তে “প্রতিবন্ধকতা” নামক শব্দটির আনাগোনা বেশ হয়েছে। যার পরিণাম ছিল সকলেরই কাছে অকল্পনীয়। যার অকাল স্মৃতি যে কেউই কাটাতে চাইবে খুবই তাড়াতাড়ি। তেমনি বর্তমান শতাব্দীর এক প্রতিবন্ধকতার হাহাকার আজও এই গ্রহের মানুষ সন্নিকট হতেই দর্শন করছে এবং তার শিকারও হচ্ছে বেখেয়ালভাবে। এরই মধ্যে হয়তোবা কিছু পক্ষ রিলিফের খোঁজে কাতর ; কেউবা বসের কাছে “ছাটাই” নামক শব্দের শিকার ; কেউ কেউ অন্যের হক মেরে অবৈধভাবে সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আবার এক পক্ষীয় ক্ষুদে জনতা ‘জুম‘ নামক ব্যাক্তি দর্শনমূলক ক্ষেত্রে ক্লাস করতে ব্যস্ত।।
লেখক আজ তার আপন ভণিতা দ্বারা তুলে ধরতে চায় তার উদ্যোগী সেসব মনোভাব যার ফলাফলে বিরূপ পরিবেশে ঘরেবদ্ধ জীবনে সে নিজেকে রাখতে পেরেছে কিছুটা হলেও মানসিকভাবে স্থিতিশীল।
মানুষকে ” অস্থির প্রকৃতির প্রাণী ” হিসেবে আখ্যায়িত করলে হয়তোবা কোনো অপরাধ হবে না। জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্তে সে নিজেকে রাখতে চায় সর্বদা ব্যস্ত ও সকল বিনোদনের শরীক। কোয়ারেন্টাইনের মুহূর্তে মানুষের অবস্থাকে জেলখানার প্রিজনারদের সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। কারণ সব প্রিজনারেরা যদি আসামিদের পাহারা না দিয়ে অযথা জেলের বাইরে ঘোরাফেরা করে তাহলে আসামিদের দ্বারাও জেলখানার গন্ডি পাড়ি দেওয়ার কান্ড ঘটতেই পারে। তেমনি ঘরেবদ্ধ নিউট্রাল পরিবেশে যেন অস্থির হোমো সেপিয়েন্সের দল ঠিক উক্ত প্রিজনারদের মতোই জেলে বন্দি। যিনি নিজে জেলের আসামি নন কিন্তু আসামিদের জন্যে তাকেও সেই এলাকার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকতে হয়৷ তবে মানুষের বাইরে পদার্পনে ” চোর পালানোর কীর্তি ” না হলেও, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর যে অভিজ্ঞতা হতে পারে তা অব্যক্তই রাখি।
কোয়ারেন্টাইনকালে মনুষ্যসকল দর্শন করবে কিছু বিরূপ প্রাকৃতিক মনোভাবের যা তাকে করে ফেলে পুরোপুরি স্থবির। ” ডিপ্রেশন বা বেবি ব্লুসের ” কথা বলছি।। চঞ্চল মনে চঞ্চলতার মধ্যে স্থবিরতার সেই নিয়ামক একজন হোমো সেপিয়েন্সকে যেন করে তোলে উদ্দেশ্যহীন। কোয়ারেন্টাইনকালের প্রারম্ভে লেখকও যেন ঠিক একই আবহাওয়ার বিরূপ স্বাদ আস্বাদন করেছিল। সেই অকাল স্মৃতি আর নাই বলি।।
কথায় আছে,, ” অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা “। আর সেই অলসতার উদ্রেক পুনর্বার জাগতে না দেওয়াই ছিল লেখকের পরবর্তী উদ্যোগ। টিভিতে রোজ আমরা সাক্ষাৎ পাই বৈচিত্র্যময় নানা এডভেটাইজের। তেমনি এক এডভেটাইজের মূল বাণী লেখকের ক্রান্তিলগ্নের মুহূর্তে চেতনা জাগরণের মূল প্রভাবক ছিল। প্রতিপাদ্য ছিল,, ” নিজেকে নিজের কর্মক্ষেত্রের জন্য জাগিয়ে তোলো আরও উন্নতরভাবে “। লেখকের ছাত্রজীবনে কর্মক্ষেত্রের স্বাদ এখনও আস্বাদন না হলেও ছিল আরও নানা বৈচিত্র্যময় ক্ষুদ্রাকার ক্ষেত্র৷
লেখক তাই তার অবসরের সাথী পেপার ক্রাফটিং ও ক্যালিগ্রাফিং এর উপর কিছুটা জোর বাড়াল। অর্থহীন এসব কাজে অর্থ না মিললেও মনের খোরাক কিছুটা হলেও মিটে। হয়তোবা অনেকে নানা অনলাইন প্রতিযোগিতায় নিজের মেধার প্রমাণ দেখাচ্ছে, কেউবা আপন সংঘ বা কর্মক্ষেত্রকে আরেকটু উন্নতির পথে ধাবিত করার চিন্তাভাবনা করছে। লেখক তাই তার প্রতিভা ও পছন্দনীয় কর্মে নিজেকে ভাসিয়ে দিল। বিভিন্ন ক্ষুদে সংঘের উন্নতির নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে নিজের মানসিক চিন্তার বিকাশ ঘটানো, নানা অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে হারের শিক্ষা অর্জন, নিজস্ব ব্যাক্তিগত দুর্বলতার পর্দা সরিয়ে সেসব ক্ষেত্রে সবলতা অর্জনের চেষ্টা, বাগান করে ইংরেজি অনুচ্ছেদ ” মাই গার্ডেনের ” মুল মর্মার্থ টের পাওয়া ও তীব্র সুখ অর্জন করা ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ডের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ লেখকের মনে ক্রান্তিলগ্নে এনেছে বিষন্নতার মাঝে তীব্র সুখময় বৈচিত্র্যতা। মুলত এতসব কিছুর বিচিত্র ফলাফলের সাথেও ধর্মীয় নতুন গুণাবলি ও শিক্ষা অর্জন ছিল লেখকের এই কোয়ারেন্টাইনকালের বিষন্ন জীবনের মধ্যে এক অভাবিত পদ্ম ফুল।
এই সময়ে এক পক্ষীয় জনতা নিজের জীবনের বৈচিত্র্যময় সুখ অর্জনের পিছে ছুটছে ; আবার আরেকপক্ষ একই মুহুর্ত বারংবার কাটানোর অভিজ্ঞতার কারণে দিনের পর দিন চরম মনস্তাপে ক্লিষ্ট হচ্ছে। লেখক বেছে নিয়েছে প্রথমপক্ষীয় জনতাদের ছাউনি,, কারণ নতুন কিছু করার অভিজ্ঞতা মুলত মানুষ নামক প্রানীর মন নামক দৃশ্যহীন অংশে সুখের খোরাক বয়ে আনে।
এই সময়কালে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য জানার ও চঞ্চলতার জীবনীতে একটু স্থির হয়ে আগামী দিনের জন্য সমত্বরণে এগিয়ে চলার জ্বালানি আমাদেরকে সংগ্রহ করে নিতে হবে। যদি সৃষ্টির সেরা জীব এই কোয়ারেন্টাইনকালকে একটু ভিন্নভাবে কল্পনা না করে তাহলে আগামী দিনের সংগ্রামে সে হয়ে পড়বে যুদ্ধে অবস্থানরত তরোয়ালহীন এক যোদ্ধার মতো। কারণ,,,
উক্ত যোদ্ধা যতই ক্ষিপ্র হোক না কেন, তার প্রতিরক্ষার প্রধান ঢালই তার কাছে অনুপস্থিত। কোয়ারেন্টাইন,, এক পক্ষের কাছে যেমন অযথা সময় নষ্ট করার মুহূর্ত তেমনি অন্যপক্ষের কাছে আগামী দিনের সংগ্রামে নিজের প্রতিরক্ষার ঢাল তৈরির সুবর্ন সুযোগ।
মানসিকভাবে স্থিতিশীলতা অর্জন করা হয়তো অনেকের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার মনে হলেও, ক্রান্তিলগ্নে লেখকের কাছে নতুন কিছু করার স্বাদই লেখককে পরবর্তীতে ডিপ্রেশন বা ফেসবুকে ‘ভাল্লাগে না’ বলে পোস্ট করার অভিজ্ঞতার কাঠগড়া থেকে মুক্ত রাখতে সহায়ক হয়েছে। তাই,,
গোফ খেজুরে মানুষের জন্য ক্রান্তিলগ্নে নতুনত্বের অনুশীলন করাই হচ্ছে মানসিকভাবে স্থিতিশীলতার মূল নিয়ামক – এই বাণীই লেখকের মূল প্রতিপাদ্য।
Md. Hasibul Hassan
School & College Categ0ry
GB041