করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ও উদ্বেগজনক এক অভিজ্ঞতা| চলমান এই পরিস্থিতি আমাদের মানসিক অবস্থাকে নানাভাবে বিপর্যস্ত করছে|এই মুহূর্তে শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতার প্রতি খেয়াল রাখাটাও আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ । এখন প্রশ্ন আসে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আমাদের মনে যে ভীতির সঞ্চার করেছে, সেটা আমরা কিভাবে দূর করবো? গৃহবন্দী এই নতুন জীবন এবং এর ফলপ্রসূত মানসিক চাপ আমরা কিভাবে সামলাতে পারি? একজন এইচএসসি শিক্ষার্থী হিসেবে আমি কিছু সাধারণ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই নিজেকে মানসিকভাবে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
১.পরিস্থিতি মেনে নিন: যেকোনো সংকটের সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রথম ধাপ হলো পরিস্থিতি মেনে নেয়া এবং নিজের জায়গা থেকে সাধ্যমতো তা মোকাবিলার চেষ্টা করা| এই মহামারী পুরো বিশ্বের জন্যই একটি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা,তাই ঘাবড়ে না গিয়ে পরিস্থিতি মেনে নিতে শিখুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। মনে রাখবেন, মানসিক ও শারীরিক শক্তির সমন্বয়ই পারে করোনাযুদ্ধে আমাদেরকে জয়ী করে তুলতে।
২.গুজবে কান নয়: করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের ভীতির অন্যতম কারণ হলো এর নতুনত্ব এবং এই ভাইরাস নিয়ে গড়ে উঠা নানাবিধ গুজব| স্বাভাবিকভাবেই এসব গুজব অযথা উদ্বেগ এবং ভীতির সৃষ্টি করে আপনার মানসিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে| এক্ষেত্রে করোনা সংক্রান্ত যেকোনো আপডেটের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত আপডেট ছাড়া অন্য সোর্স থেকে প্রাপ্ত আপডেট আমলে না নেয়াই শ্রেয়।
৩.স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: করোনাকালীন এই সময়ে শুধু যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই অনেক ক্ষেত্রে আপনাকে মানসিকভাবে দৃঢ় রাখতে সাহায্য করবে যেহেতু এটি হাঁচি কাশি এবং সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়,তাই কিছুক্ষণ পর পর জীবাণুনাশক সামগ্রী ব্যবহার করার মাধ্যমে সংক্রমণের আশংকা এবং ভীতি থেকে মুক্ত থাকা যায়।
৪.উৎপাদনশীল কাজে সময় ব্যয় করুন: গৃহবন্দী কোয়ারেন্টিনের এই সময়কে প্রোডাক্টিভ বা উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় করুন|সময়ের অভাবে ফেলে রাখা অসম্পূর্ণ কাজগুলো নতুন করে শুরু করতে পারেন। সময়কে কাজে লাগানোর জন্য পুরোনো ভালো অভ্যাসগুলো চর্চা করতে পারেন|কলেজ লাইফ শেষে তুলে রাখা গিটারটির ধুলো সরিয়ে তা হাতে নিন, অথবা অনলাইনে পুরোনো বন্ধুদের খোঁজ খবর নিন, এই কাজগুলো যেমন আপনার মনে প্রশান্তি এনে দিবে, তেমনি আপনার মানসিক চাপ সামলাতেও সহায়ক হবে।
৫.পরিবারের সাথে সময় কাটান: ব্যস্ততার অজুহাতে আমরা প্রায়ই আমাদের পরিবারকে সময় দিতে পারি না। ঘরবন্দি এই সময়ে পারিবারিক বন্ধনকে আবারো নিবিড় করে তোলার চেষ্টা করুন, একসাথে সিনেমা দেখুন, খেলা দেখুন, আড্ডা দিন। এর ফলে মানসিকভাবে ভালো থাকা যাবে,আবার পারিবারিক ঘনিষ্টতাও বাড়বে।
আমরা যদি প্রতিটা পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকগুলো সরিয়ে ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবি,তাহলে অনেকটাই চাপমুক্ত থাকা যায়| চলমান এই দুর্যোগের সময়ে অপ্রাপ্তিগুলোকে দূরে সরিয়ে পরিস্থিতির ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবাটাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
Jannatul Mawa Mithila
School/College Student
GB116