প্রায় অর্ধেক বছর কাটিয়ে দিলাম বাসায় বসে থেকে। এমনটা কি কেউ কখনও নিজের ফ্যান্টাসি হিসেবেও কল্পনায় চেয়েছিলো? চিরচেনা ব্যস্ততা নেই, ক্লাসে যাওয়ার তাড়া নেই, ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখগুলোর সাথে দেখা সাক্ষাত হবে না, এমনকি ঘর থেকে এক পা বাইরে ফেলার আগে অনেক সতর্কতা মেনে তারপর যেতে হবে…এমনটা আমরা আসলেই কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।
কিন্তু যখনই কাউকে করোনার করাল থাবায় কষ্ট পেয়ে কিংবা হাসপাতালে এ দুঃসময়ে একটা সিট না পেয়ে ধুকে ধুকে মারা যাওয়ার চিত্র দেখি, তখন মনে হয় হাজার বিষণ্ণতার চেয়েও নিজের ও পরিবারের সুস্থতা অনেক বড় পাওয়া। কিন্তু সবসময় ব্যস্ত থাকা জীবন হুট করে অলস হয়ে পড়লে, তা খুব বেশিদিন নেওয়া যায় না। তাই, নিজের ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার জন্য আমি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।
- সফট স্কিলস আয়ত্ত করা
আমরা জানি, চাকুরীর বাজারে প্রার্থীদের সফট স্কিলের ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু দৈনন্দিন রুটিনের বেড়াকলে পড়ে, আমরা নতুন কিছু শেখার তেমন সময় সুযোগ কোনোটায় করে উঠতে পারি না। সেক্ষেত্রে এ লকডাউনের বিশাল বন্ধটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। তাই, বিভিন্ন অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে মাইক্রোসফটের বেশ কিছু স্কিল আয়ত্ত করেছি এবং করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
- ফ্রিল্যান্সিং চালিয়ে যাওয়া
একজন শিক্ষার্থী মূলত টিউশনের উপর নির্ভর করে তার হাতখরচটা চালিয়ে নেয়। হঠাৎ কোভিড ১৯ মহামারীর কারণে আমাদের সামান্য উপার্জনের এ পথটাও বন্ধ হয়ে যায়। লেখালেখির প্রতি কিছুটা শখ থাকায়, কনটেন্ট লেখাকে কেন্দ্র করে নিজের একটা উপার্জনের ক্ষেত্র তৈরী করে নিয়েছিলাম। এ সময়ে যতটা পারি, কনটেন্ট বা আর্টিকেল লেখার কাজ করে, নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি এবং নিজের এ দক্ষতা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করেছি।
- গল্পের বই পড়া এবং সিনেমা দেখা
ছোটবেলায় বই পড়ার নেশার কারণে সবাই বইপোকা ডাকলেও বিগত বছরে একটিও বই না পড়ার খারাপ রেকর্ড হয়ে গিয়েছিলো। মহামারীর এ সময়ে বাসায় অলস বসে মন খারাপ না করে, একটা একটা করে বই পড়া শুরু করেছি।
একইসাথে, মুভিখোর মানুষের জন্য বিশাল সুযোগটা তো কাজে লাগানোর মতোই! বই আর সিনেমা – এ দুটি যেন আমাদের যথার্থ মনের খোরাক।
- পরিবারকে সময় দেওয়া
যারা আমার মতো হোস্টেলে থাকেন, তারা একটু সুযোগ পেলেই বাসায় নিজের আপন মানুষদের কাছে ফিরে আসতে চাই। করোনার সময়টা আমাদের হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আপনজনের গুরুত্ব। তাই, চেষ্টা করেছি কাছের মানুষগুলোর সাথে মিশতে, সময় কাটাতে, তাদের আরো বেশি করে জানতে। অনেকসময় দূরে থাকার কারণে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। কোভিড ১৯ যেন আমাদের আরেকবার সুযোগ করে দিয়েছে নিজেদের দূরত্ব ঘুচিয়ে নেওয়ার।
এ সবকিছুর মাধ্যমেই চেষ্টা করি ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার। বিশ্বাস রাখি, সুদিন ফিরে আসবেই। ততোদিন সুস্থ থাকি, বন্ধটা নিজেদের উন্নতি সাধনে কাজে লাগাই।
Humaira Binte Rashid
University category
GB017