“আমি যেভাবে কোভিড-১৯ মহামারীর মাঝে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখছি”

 

বিশিষ্ট লেখক S. P. Robbins এর মতে, কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা অবস্থার প্রতি কোনো ব্যক্তির অনুকূল বা ইতিবাচক, প্রতিকূল বা নেতিবাচক বিবরণীকে মনোভাব বলে এই সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট যে মনোভাব দুই প্রকারের একটি ইতিবাচক অন্যটি নেতিবাচক মনোভাব এখন প্রশ্ন হলো মনোভাব কীভাবে তৈরি হয়? ইতিবাচক মনোভাব তৈরী করা যায় কীভাবে? এবং কীভাবে এটি ধরে রাখা যায়? এসব প্রশ্নের উত্তরের পূর্বে আমাদেরকে জানতে হবে কী কী উপাদানের সমন্বয়ে মনোভাব তৈরি হয়? মনোভাব সৃষ্টির উপাদান গুলো হলো- 

    • মনস্তাত্ত্বিক
  • পারিবারিক
  • সামাজিক 
  • অর্থনৈতিক এবং
  • রাষ্ট্রীয় উপাদান। 

এখন কোভিড-১৯ মহামারীর মাঝে মনোভাব তৈরীর বিভিন্ন উপাদান গুলোর মধ্য দিয়ে যেভাবে তিবাচক মনোভাব ধরে রাখা যায় তা বিশ্লেষণ করা যাক- 

 

মনস্তাত্ত্বিক উপাদান:

মানুষের জ্ঞান, বিশ্বাস, চিন্তা, মূল্যবোধ, উপলব্ধি, ধারণা ইত্যাদি হলো মনোভাব সৃষ্টির মনস্তাত্ত্বিক উপাদান। যদি এই সমস্ত বিষয়ে ইতিবাচকতা ধরে রাখা যায় তবে তা ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে ভূমিকা পালন করবে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে বিভিন্ন উপায়ে জ্ঞান, চিন্তা, উপলব্ধ ইত্যাদির চর্চা করা যায়। যেমন- বই পড়া, হতে পারে সেটা ফিকশন বা ননফিকশন, নান্দনিক কোনো সিনেমা দেখা, হতে পারে সেটা সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক কিংবা হুমায়ুন আহমেদের, লেখালেখি করা সেটা কবিতা বা অন্য যে কোনো কিছু হতে পারে ঠিক যেমন রাফ খাতায় লিখতেন সুকুমার রায় বা জীবনানন্দ দাশ। এসকল কাজের মাধ্যমে চিন্তা শক্তি বৃদ্ধি পায়, মন সতেজ থাকে ফলে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা যায়। আবার এই মহামারীর সময়ে কিছু জীবনমুখী শিক্ষা যেমন- সাঁতার, ড্রাইভিং ইত্যাদি শেখা যায় এতে করে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। নিজের শখের কাজ করা এছাড়া নিয়মিত ঘুম ও শরীর চর্চা স্বাস্থ্য  ভালো রাখার পাশাপাশি মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে যা ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে সহায়তা করে।

 

পারিবারিক উপাদান:

পরিবার যেহেতু একজন মানুষের সবচেয়ে কাছের একটি প্রতিষ্ঠান তাই ব্যক্তির মনোভাব সৃষ্টির পেছনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেকোন খারাপ সময়ে সবার আগে পরিবারই এগিয়ে আসে। তাই মহামারীর এই সময়ে সুযোগ এসেছে পরিবারকে নতুন করে সময় দেয়া, পরিবারের কাজে সহায়তা করা, একসাথে গল্প করা, একসাথে খাওয়া দাওয়া করা। এসব কাজের মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধন একদিকে যেমন বৃদ্ধি পায় অপরদিকে নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকা যায় যা ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে ভূমিকা রাখে। 

 

সামাজিক উপাদান:

সামাজিক জীব হিসবে সমাজের বিভিন্ন উপাদান যেমন- পাড়া প্রতিবেশী, সহপাঠী, আত্মীয় স্বজন ইত্যাদি একজন মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। করোনা মহামারীর এই সময়ে একে অপরের সহযোগিতা করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই এই সময়ে একে অপরের সাথে কথা বলা, খোঁজ খবর নেয়া, বিপদে সাহায্য করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানসিক শক্তি যোগাতে পরে। সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ রাখা, ভার্চুয়াল মাধ্যমে আড্ডা দেয়া এই কাজগুলো মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। যদি কেউ গ্রামীণ পরিবেশে থাকে তাহলে সেখাকার প্রকৃতি অর্থাৎ মাঠ, নদী, বিল ইত্যাদির মাঝে সময় কাটাতে পারে যা মনকে সতেজ রাখবে এবং ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখবে।

 

অর্থনৈতিক উপাদান: 

বর্তমান পুঁজিবাদের যুগে অর্থ মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। এই মহামারীর সময়ে অনেকে তাদের কাজ হারিয়েছে, অনেকের পেশা পরিবর্তন হয়েছে, আয় কমেছে। এই বিষয় গুলো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ভাবাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই মূহুর্তে যদি কেউ নেতিবাচক চিন্তা না করে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে এই মহামারীর সময়ে তাহলে তার আত্মবিশ্বাস বড়বে। যেমন- ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে নিজেকে প্রস্তুত করা, নতুন কোনো স্কিল শেখা, উদ্যোগক্তা হতে চাইলে সেদিকে পদক্ষেপ নেয়া। এখন অনলাইন প্লাটফর্মে ব্লগিং, ফ্রিল্যান্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই মহামারীর এ সময়ে এগুলোর যেকোনো একটি করলে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যায় এতে করে সুস্থ চিন্তা বজায় থাকে। আবার ভার্চুয়াল বিভিন্ন ইন্টার্নশিপের সুযোগ গ্রহণ করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায় এতে করে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে সাহায্য করবে।  

 

রাষ্ট্রীয় উপাদান:

রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি, প্রশাসন, সরকার, গণমাধ্যম ইত্যাদি বিষয়গুলো একজন ব্যক্তির মনোভাবের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রচারনায় অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। হিটলারের প্রচার উপদেষ্টা গোয়েবলস এর মতে, একটি মিথ্যা বার বার প্রচার করলে তা সত্য বলে গৃহীত হয়। তাই একজন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথম কাজ হবে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয় নিজের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করা। তারপর সেই বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত নেয়া। এতে করে অনেক নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকা যায় ফলে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা যায়।

উপরের আলোচনায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে কোভিড-১৯ মহামারীর মাঝে আমি আমার ইতিবাচক মনোভাব যেভাবে ধরে রাখছি তারই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। তাই আমি বিশ্বাস করি এভাবে বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে নানা রকম কাজের মাধ্য দিয়ে যে কেউ এই মহামারীর সময়ে তার ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে পারে।

 

Asadullah All Galib

University Category

GB052

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *