আমি যেভাবে কোভিড-১৯ মহামারীর মাঝে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রেখেছি

গগণে আজ জমেছে মেঘ

কিছু জীব তার উল্লাসে,

কিছু জীবের সৃষ্টি দিগন্তের পাশে

যদি তপন দেয় উকি-ঝাপ।

তপনের ছোট কিরণ ছড়িয়ে,

কাটবে যে কালো মেঘ জমাট।

 

ছোট বেলায় মা বলতো, খারাপ সময় বেশি দিন থাকেনা। খারাপ সময়ের অর্থ তোমার জন্য ভালো দিন অপেক্ষা করছে। তুমি এখন পরীক্ষা মধ্যে আছো। ধৈর্য্য ধারণ করো এবং সময়টাকে গ্রহণ করো। তাহলে দেখবে খারাপ সময়টুকু তোমার কাছে স্মৃতিকথার মত থাকবে। ধৈর্য্য হারালে এই খারাপ সময়টুকু তোমার জীবনের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ছোটবেলার এমন মূল্যবান কথাগুলো খারাপ সময়ে কানে ভেসে আসে। কোভিড-১৯ মহামারীকে খারাপ সময় ছাড়া আর কি বলা যায়, তা বিজ্ঞ জনরা ভালো বলতে পারবে। তবে আমার কাছে এটি কবিতার কালো মেঘের মতো। যা ক্ষণিকের জন্য সবার জীবনে এসেছে।

 

আকাশে মেঘ দেখে বর্ষাকাল ভাবাটা একধরণের বোকামি। মেঘ করলেই সেটা বর্ষাকাল ধারণা করা যাবেনা। প্রকৃতি তার নিয়ম পরিবর্তন করতে পারে। এই এই পরিবর্তন কখনো সুসময়, কখনো খারাপ সময় বয়ে আনতে পারে। তাই প্রকৃতির সাথে সমান তালে চলতে হবে। অসময়ের মেঘ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না। একটা সময় কেটে যায়। সে সময় ধৈর্য ধরে খারাপ সময় কিভাবে এড়ানো সম্ভব তা ভাবা এবং তার পরবর্তী সময়গুলোর পরিকল্পনা করা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

আমি কোভিড-১৯ মহামারীর প্রথম দিকে মোবাইল ফেসবুকের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ি। দেখা গেল আমার দৈনন্দিন কাজগুলোর সব ছেড়ে দিয়ে আমি একা হয়ে পড়ছি। আমার জীবন মোবাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। কিছুদিন যাওয়ার পর আমি হতাশায় চলে যাচ্ছি। আমার নিজেকে কেমন যেন একা একা মনে হচ্ছে। অবশেষে আমি আমার ধৈর্য হারিয়ে ফেললাম। আমার মেজাজ মনোবল পরিবর্তন হয়ে গেল। আমার মা একদিন আমাকে বললো,

 

তুমি ওই ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাওনি যে বনের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছে। তোমার কি উচিত না ঠান্ডা মাথায় বসে পথ বের করা। 

 

মায়ের কথাগুলো সে সময় বেশ বিরক্ত লাগলো কিন্তু যখন আমি রাতে ঘুমাতে গেলাম আমার মাথায় মায়ের কথাটার মানে খুঁজতে লাগলো। আমি ২/৩ দিন পর্যন্ত ভাবতে লাগে পড়লাম। আমি বুঝতে পারলাম আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু এখন আমার হতাশার কারণ। আমি আমার ইন্টারনেট সংযোগগুলো থেকে প্রথমে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করলাম। দেখা গেল আমি কছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়লাম বইয়ের প্রতি। আমি আমার ধর্ম কর্মের প্রতি মনোযোগ দিয়েছি। ধর্ম কর্মের প্রতি ঝুঁকে যাওয়ায় আমার হতাশা অনেকাংশে কমে গেল। আমি কখন বাসার টুকটাক কাজে হাত দিতে শুরু করি। এগুলো করার মাঝে আমার মোবাইল থেকে এবং হতাশা থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এখন আমি ঠিক তেমনই ব্যস্ত যেমন ব্যস্ত আমি কোভিড-১৯ মহামারীর পূর্বে ছিলাম। একসময় কালো মেঘ থাকলেও আমার আকাশে এখন আমার আকাশে সূর্য উকি দিয়েছে৷ দুইটা জিনিস আমার মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে, প্রথমত ধর্ম কর্ম, দ্বিতীয়ত মা-বাবা।

 

বদলে গেছে আমার মহামারীতে কাটানো জীবন বদলে গেছে কিছু অভ্যাস।

 

ধন্যবাদ পিতা মা।

Neamotullah

University Category

GB011

 

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *