গত ৮ মার্চ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব হয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে। ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ দীর্ঘদিন আমি ঘরে আবদ্ধ থেকে নিজের জীবনকে নতুন করে জেনেছি,নতুনভাবে পথ চলতে হয়েছে।আসলে জীবনের অর্থ সময়ের সাথে পরিস্থতির সাথে সাথে পরিবর্তন হতে থাকে।জীবন চলমান আর বহমান তা থেমে থাকবে না।চলতে থাকবে অনন্তধারায়।আমি এই দীর্ঘ সময় লকডাউনে থাকার পর ও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি পরিবেশের সাথে। নিজে সুস্থ থাকার জন্য এবং অন্যকে সুস্থ রাখার জন্য ঘরে অবস্থান এবংসচেতন থাকতে হবে। আমি মনে করি, বতর্মান সময়টা হচ্ছে একটি যুদ্ধ। যা নিজের এবং এক অদৃশ্য ভাইরাসের সাথে করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমাদের।সান জু তাঁর “The Art Of War” বইটিতে লিখেছেন–
“ যদি নিজের শত্রুকে জানেন এবং নিজেকে জানেন, শত যুদ্ধেও ভয়ের কারণ নেই।যদি নিজেকে জানেন কিন্তু শত্রুকে নয় তাহলে প্রতে্্যকটি যুদ্ধে আপনি পরাজিত হতে পারেন।”
আমরা এই অদৃশ্য ভাইরাস সম্পর্কে অবগত আছি।এখন শুধু আমাদের সচেতনতায় পারে এর বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে।করোনার এই দীর্ঘ সময় ঘরে অবস্থান করার কারণে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছ। আমরা অনেক কিছু শিক্ষা লাভ করছি।আমি মনে করি,এই করোনাকালীন সময়ের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছ। আমার মতামত নিন্মে উপস্থাপন করা হলোঃ
১.প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ প্রকৃতি আবার তার হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরে পাচ্ছে।অনেক পরিবেশবিদরা বলছেন যে,প্রতে্্যক বছর কিছু সময় মানুষকে ঘরে আবদ্ধ রাখলে সব দূষণ হ্রাস পাবে।আর প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও ঠিক থাকবে।উদাহরণস্বরূপ ঢাকার কথা উল্লেখ করা যায়। বিবিসিতে “ঢাকা সপ্তাহ“ নামে একটি প্রোগামে ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য বলা হয়।২২মার্চ,২০২০ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান সূচক(একিউআই) ইনডেক্সে ১৮ নম্বরে নেমে এসেছে ঢাকা যেখানে গত ছয় মাস ধরেই দিনের বেশিরভাগ সময় প্রথম অবস্থানে ছিল ঢাকা।সূচক ৩৯১ পযর্ন্ত উঠছিল।বিশেষজ্ঞদের মতে,৩০০ এর উপরে গেলে তাকে দুর্যোগ অবস্থা বলে।কিন্তু বতর্মানে এ সূচক ৮৫ তে নেমে এসেছে।এছাড়াও কক্সবাজার,সেন্টমার্টিন এবং বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ও চিড়িয়াখানা গুলো তাদের রুপ ফিরে পেয়েছে।
২.পরিবারের সাথে সময়ঃ পরিবারের সাথে দীর্ঘসময় কাটানোর সময় পাওয়া যাচ্ছে যা পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করেছে।পূর্বে পড়াশোনার জন্য এত সময় পরিবারের সাথে অতিবাহিত করার সুযোগ পাওয়া যায় নি।নিজের বাবা,মা,ভাই,বোনের কাজে সাহায্য করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
৩.বই পড়াঃ আমরা সবাই একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি যতটুকু সুযোগ পেতাম হয়ত অবসর সময়ে বই পড়তাম।কিন্তু এখন আমাদের একাডেমিক চাপ নেই বললে চলে।যার ফলে অনেক বই পড়তে পারতেছি যা আমাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করছে।
৪.ধর্মীয় চর্চাঃ এ দীর্ঘ সময়ে আমাদের ধর্মীয় চর্চা বেড়েছে এবং ধর্মীয় বই পড়ার ও সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।কুরআন সঠিকভাবে শেখা এবং সূরাগুলো মুখস্ত করার সময় পাওয়া যাচ্ছে।
৫.অনলাইনকেন্দ্রিকঃ বতর্মান যুগ আধুনিক ও ডিজিটাল যুগ। করোনাকালীন অনলাইন সবার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ঘরে বসে ক্লাস করা,কেনাকাটা করা এবং ব্যবসা করতে পারছে।বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ফ্রি কোর্স করার সুযোগ পাচ্ছে। ঘরে বসে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া যাচ্ছে।সবাই নিত্য নতুন কাজ করছে।
৬.স্বাস্থ্য সচেতনতাঃপূর্বের থেকে মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মানসিকতাতৈরী হয়েছে। পাশাপাশি ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে উঠেছে।সবাই নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছে।
বতর্মান সময়টা আমরা অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি।হতাশ হওয়া যাবে না।আমরা আমাদের মনোবল ধরে রাখতে হবে।ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই আমরা এই মহামারী থেকে উত্তরণ পাবো।আল্লাহ তালা বলেন-
“বলুন তা ঈমানদারদের জন্য হিদায়াত ও শিফা।”
আমাদের সবাইকে ধের্যধারণ করতে হবে।বতর্মান সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে হবে
Mst. Fahima Akter Easa
University Student
GB085