পৃথিবীতে কোভিড– ৬৯ এর ভয়াবহতা এখন ও কাটেনি। সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খবরের পাতা আর টেলিভিশনের পর্দায় যতবারই চোখ বুলিয়েছি ততবারই শুনেছি মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দিনকে দিন। তার সাথে যােগ হয়েছে ধর্ষণ, খুন, দুর্ঘটনা, দুর্নীতি, আত্নহত্যা আর যত আছে নেতিবাচক খবর বাকি। সব মিলিয়ে আমরা সবাই একটা খুব ঘােলাটে আর অস্বস্তিকর পর্যায়ে আছি। এসবের মধ্যে নিজের শারীরিক স্বাস্থ্যর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা বেশ কঠিন৷ মন ভালাে রাখতে নিজেকে হতে হয় আত্মবিশ্বাসী আর দেখতে হয় চারপাশের যা কিছু ঘটছে ইতিবাচক। যদিও এমন সময়ে নিজের মানসিক ভারসাম্য রাখাটা খুব কঠিন, তবে একেবারে অসম্ভব কিছু না। আমি নিজের ইতিবাচক মনােভাব ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সেই শুরু থেকে। নিজেকে এই নেতিবাচকতার পৃথিবীতে না ডুবিয়ে এখন পর্যন্ত যেভাবে টিকে আছি ইতিবাচকতা নিয়ে আমার লেখায় তাই তুলে ধরছি :
রুটিন মাফিক চলা
লকডাউনের দিনগুলােতে সবচাইতে কঠিন ছিল রুটিন মাফিক কাজ করা। তবে এ ঝামেলা কাটিয়ে উঠে প্রতিদিন খুব ভােরে উঠে নামাজ পরা থেকে শুরু করে রাতে বিছানায় যাওয়া পর্যন্ত সবকিছু রুটিন মতাে করেছি বা চেষ্টা করেছি। এর দ্বারা আমি কখনই অলস বসে থাকি নি৷ যা আমাকে আমার মানসিক ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করেছে, আর প্রতিদিনের কাজ সময় মতাে হওয়ায় পিছিয়ে পরার ভাবনা কম ভাবিয়েছে আমাকে, যা আমার ইতিবাচক মনােভাব গড়তে সহয়তা করেছে।
ভার্চুয়াল জগতে ঢু মারা
করােনায় বাড়ির বাইরে বের হওয়া বারণ ছিল। তবে পরিবার বা বন্ধু–বান্ধবি সবার সাথেই যােগাযােগ রেখেছি। এই ধরুন ঈদে কারাের বাসায় যাওয়া হয়নি, তবে কথা হয়েছে, খবর ও নিয়েছি তাদের। কার বাসায় কি রান্না হল, কে কি করছে, সবাই সুস্থ আছে কিনা? এসবের উত্তর এসেছে আমার ভার্চুয়াল জগত থেকেই। মাঝেমাঝেই বন্ধুরা মিলে ভিডিও কলিং এ আড্ডা দিয়েছি, সে কতাে কথা! একেবারে সামনা–সামনি কথা বলার মতােই তাে। এসব আমাকে নিজের অবসর সময়ে খুব বেশি আনন্দ দিয়েছে, যার কারনে আমি ইতিবাচকতা ধরে রাখতে পেরেছি।
পরিবারকে সময় দেয়া
লকডাউনের আগে বিশ্ববিদালয়ের ক্লাস, ইন্টার্নশিপ বা ভলান্টারি কাজের জন্য পরিবারকে সময় দেয়া হতােনা। রােজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরা আর রাত করে বাসায় ফেরা। দেখাই হত না বাসায় অন্য কামরায় কে কে আছে , কি করছে! তবে এখন আর এমনটা হয়না। সকাল সন্ধ্যা মা–বাবা–ভাই–বােনের সাথে হাসি–ঠাট্টায় খুব ভালােই সময় কাতছে আমার। আর পরিবারের সবাই ভাল থাকলে নিজেকে তাদের মাঝে ডুবিয়ে রাখা যায়, নিজের মনের কথা বলা যায়, কোনাে দরকারে তাদের পাশে পাওয়া যায়। অবশ্য পরিবারের মতাে আর ক‘জনই বা নিজেকে ভাল করে জানে ? এই করােনার মহামারীতে আমার পরিবার সর্বদাই আমার পাশে ছিল যেমনটা তারা সবসময় থাকে। আমার পরিবারই আমার মন ভালাে রাখার দাবিদার।
সঠিক তথ্যের যােগাড়
করােনার সময়ে করােনার চাইতেও ভয়ঙ্কর ছিল কিছু ভুল, মিথ্যা, বানােয়াট তথ্য। যেমন – একরাতে গ্রাম থেকে মামা ফোন করে বললেন থানকুনি পাতা খেলে নাকি করােনা চলে যাবে! এই কথা শুনে তাে সক্কাল সক্কাল বাবা বাজারে গিয়ে থানকুনি পাতা নিয়ে এলেন, স্বাভাবিকের চাইতে ১০ গুন বেশি দামে ওইদিন বিক্রি হয়েছে থানকুনি পাতা। তবে এই তথ্য ছিল সম্পূর্ণ মনগড়া। এমন সব আজগুবি আর বানােয়াট খবর থেকে বাঁচতে ওইদিন থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর সরকারি ওয়েবসাইট গুলাে দেখি। আর এসব নেতিবাচক দিক থেকে পরিবার এবং আশেপাশের মানুশদের ও সহয়তা করি।
অন্ধকার দিনগুলােতে আলাের সন্ধান
খারাপ দিনগুলােতে ভালাে সময়ের অপেক্ষা করেছি। নিরাশ হয়ে পড়িনি, কাউকে নিরাশ হতে দেই ও নি৷ পরিবার বা আত্নীয়দের মধ্য অনেকেই কোভিড ৪৯ এর উপসর্গ নিয়ে বিছানায় থাকলেও, তাকে সাহস দিয়েছি। বারবার তার খবর নিয়েছি। যারা কোভিড থেকে সেরে উঠেছে তাদের গল্প শুনিয়েছি। তাদের যত্ন নেয়ার আর মনােবল চাঙা করার জন্য সাধ্যমতাে চেষ্টা করেছি। আর দশটা নিম্নবিত্ত পরিবারের মতাে আমার পরিবারকেও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে, অসচ্ছলতায় ভরাডুবিতেও ছিলাম দু–এক মাস।তবে আশাহত হইনি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে ভালাে থাকার যে পণ করেছি তা পালনের চেষ্টা করেছি। শুধু অপেক্ষা করেছি ভালাে সময়ের আশায় আর মনকে বলেছি, “মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে“।
নিজের উপর আস্থা রাখা
নিজেকে জানা, নিজে উপর আত্মবিশ্বাস রাখা আর নিজের কাজে নিজের আস্থাশীল থাকা এমন সময়ে খুব বেশি জরুরি। আত্নবিশ্বাস আর আহাকে পুঁজি করে এমন দিনগুলােতে টিকে থাকা সহজ। মহামারীর পর কি হবে? এখন এই মহামারীতে যদি এটা–ওটা করতে না পারি তাহলে কি হবে? মহামারী আমার জীবনের মূল্যবান সময় কেড়ে নিচ্ছে না তাে? এমন প্রশ্ন হাজার হাজার বার মনে এসেছে। কিন্তু নিরাশ হইনি নিজের উপর ভরসা রেখে এগিয়েছি৷ সময় সময় বড়দের কাছ থেকে এ বিষয়ে সাহায্য চেয়েছি। তারা আমাকে সাহায্য করেছে, মনের দ্বিধাদ্বন্দ কাটিয়ে দিয়েছে। তাই আমার মতে কখনাে কখনাে অপরকে প্রশ্ন করা উচিত, এতে করে অনেক জড়িমা কেটে যায়৷ ইতিবাচক থাকতে হলে জড়িমা কাটিয়ে, নিজের উপর আস্থাশীল হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি, যা আমাকে এই কোরােনার মহামারীতে সাহস যুগিয়েছে।
আমি নিতান্ত কম আশা নিয়ে বাঁচা মানুষ, আর জীবনের পথে নানা বিপত্তির মধ্যে এই করােনা পেনডেমিক অন্যতম। তারপরও নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে বড্ড ভালাে আছি। আশেপাশের এত এত নেগেটিভিটির তােয়াক্কা করে ইতিবাচক দিকটা নিয়েই বাঁচতে চাই।
Mohammad Al Imran
University Category
GB109