আমি যেভাবে কোভিড – ১৯ মহামারীর মাঝে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রেখেছি।

 

আমার কোয়ারেন্টাইন সময়টা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় ছিলো। অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে,১৭ মার্চ আমি ঢাকা থেকে গ্রামে আসি সাত দিনের ছুটিতে। যা প্রায় ছয় মাসে পরিনত হয়। এই দীর্ঘ সময় আমি যেভাবে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রেখেছি। বই পড়ে, বুক রিভিউ লিখে, অন লাইন টিউশনি করে, “শাহনাজ বুক্স এন্ড প্লান্টস” নামে লাইব্রেরির সূচনা,   সাতার শিখে, সাইক্লিং ও গাছ লাগিয়ে।

 

প্রথম মাস

এপ্রিলে আমি বন্ধুদের থেকে বই ধার নেই। আমাদের একটি ফেসবুক  পেজ ছিল “মুড”। এই পেজে বুক রিভিউ লিখেই দিনের অনেকটা সময় পার করে ফেলতাম। সেই সাথে ছোট ভাইয়ের সাথে ক্রাম খেলা, সন্ধার পর মা’র সাথে গল্প করা।ছোট ভাইয়ের লেখা পড়ায় সাহায্য করা। এভাবে দিন কাটছিলো। 

 

দ্বিতীয় মাস

“মে” মাসে আমি ঠিক করলাম গাছ লাগাবো, গিটার শিখব,  প্রতিদিন তিরিশ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করবো এবং ছোট ভাইকে বুক রিভিউ লিখা শেখাবো। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। এক মাসে গাছ লাগানো হলোঃ ব্লিডিং হার্ট, নয়ন তারা, পেঁপে,অপরাজিতা, পুইশাক, ধনে পাতা, পাথর কচি ও মরিচ। এসব কাজে আমার মা খুব আগ্রহী।  তাই দুজনে মিলেই বেস উৎসাহের সাথে গাছ লাগানো শেষ করলাম। একি ভাবে পরিকল্পনা মতে বাকি কাজ গুলো আসা অনুরুপ সম্পন্ন হলো।

 

তৃতীয় মাস 

অর্থাৎ জুন মাসে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে আমার কোয়ারেন্টাইন জীবনে। উত্তর অঞ্চল হওয়ায় আমাদের এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এমন সময় আমি আমার মা’র নামে “শাহনাজ বুক্স এন্ড প্লান্টস ” লাইব্রেরি শুরু করি। এখানে বিনামূল্যে বই ধার দেওয়া হয়। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৪০ জন। শুরুর দিকে ১৮টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ৪৪টি বই। অনেকেই বই ডনেট করেছে। সেই সাথে ভালো জাতের গাছের চারা সংগ্রহ বাড়াই। যেন আগামী বছর গাছের চারা ও বীজ বিনামূল্যে দিতে পারি।

 

চতুর্থ মাস

জুলাইয়ের মাঝা মাঝিতে সাঁতার শিখতে চলে গেলাম বাড়ির পাসের নিচু জমিতে। বন্যার পানি আসায় এখানে সাঁতার কাটতে অনেকেই আসে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধু মিয়াদের সাহায্যে  শিখে ফেল্লাম সাঁতার। 

 

পঞ্চম মাস

আগস্টে শুরু করি  “অন লাইন টিউশনি”। একি সাথে লাইব্রেরির বই বিতরন, নতুন পাঠকদের পছন্দের বইয়ের আবদার মেটানো। আর নবম-দশম শ্রেণির ছোট ভাই বোনদের আমার লাইব্রেরির সাথে পরিচয় ঘটাই। এ সময় বন্যার পানি নেমে যায়। নদী অনেকটাই শান্ত। প্রতিদিন সকালে  সাইক্লিং করতাম। আবার যেন শৈশব ফিরে পাওয়া।

 

অবশেষে,আমাকে সময়ের প্রয়োজনে ঢাকা ফিরতে হলো। কিন্তু আমার লাইব্রেরি বন্ধ হয়নি। ছোট ভাই ও আগ্রহী পাঠকদের দ্বারাই চালিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই আমার দ্বারা বই পড়তে ও সাইক্লিং করতে আগ্রহী হয়েছে। সাহিত্য নিয়ে কথা বলার মত নানান বয়সের পাঠকরা পরিচিত হয়েছি। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমি এই পাঁচ মাসে ঘরে বসেই অনেকের সাথে মিশতে শিখেছি। নতুন অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যা আমায় আরো নতুন ভাবে বাঁচার অনুপ্রেরনা জোগায়। ধন্যবাদ গ্রেস এত সুন্দর একটি উদ্যগের জন্য।

 

MD Faisal Ahmad

University Category

GB054

LEAVE REPLY

Your email address will not be published. Required fields are marked *