করােনা বর্তমান সময়ের এক ভয়ানক ও ভয়াবহ আতঙ্কের নাম-যার ফলে সৃষ্ট
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুধু একটি দেশের দেশের গন্ডি বা সীমানা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না
হয়ে পুরাে বিশ্বেই এক অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেছে।চতুর্দিকের এই
অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যেও এই ব্যধি থেকে উত্তোরণের প্রথম চেষ্টা হয়।
নিজেকে মানসিকভাবে স্থির রাখা।এত বাধা-বিপত্তির মাঝে থেকেও নিজের তথা
সমগ্র দেশের নিরাপত্তার নিমিত্তে প্রয়ােজন হয় ’কোয়ারান্টাইন’কোয়ারান্টাইনে
নিজেকে আবদ্ধ রেখে মানসিক বল ও স্থিতিশীলতাই হয়ে উঠে প্রাণঘাতি এই
মহামারির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁনাের প্রথম সােপান।
গত ৩১ডিসেম্বর২০১৯ সালে চীনের উহান শহরে নিউমােনিয়া সরুপ রােগটির
সূচনা হয়।পরবর্তীতে নানান গবেষণা-পরীক্ষার মাধ্যমে রােগটি COVID-19 বা
করােনা নামে বিস্তার ঘটে।বর্তমানে এই ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রমনের সংখ্যা প্রায়
৩,০৩,৯৫,৫৮৬াতন্মধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা অত্যধিক। ৩,৪৬,৮০৫
জন।কিন্তু যে হারে প্রতিনিয়তই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে নিশ্চিতভাবে
গননা দুঃসাধ্য। শুধু নগরবাসীর জীবনেই নয়,গ্রাম-গঞ্জের আনাচে কানাচে
করােনার প্রভাব সুস্পষ্ট।
আমারা সবাই জানি যে,কোনাে রােগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরােধই উত্তম।কিন্ত
দুঃখের বিষয় এই যে, এই রােগের প্রতিরােধক হিসেবে এখনও নিশ্চিতভাবে কোনাে
চিকিৎসা আবিস্কৃত হয়নি।যদিও বিশ্বের বড় বড় দেশের বিশেষজ্ঞগণ প্রতিনিয়তই
চেষ্টা করে যাচ্ছে।কিন্ত রােগটির সাথে মােকাবেলা করা শুধু ডাক্তার বা
বিশেষজ্ঞদের কাজই নয় বরং একটি দেশের সর্বসাধারণ মানুষদের প্রচেষ্টাও
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতিতে মূলত রােগটির প্রতিকার
করা যেতে পারে-(১)কোয়ারান্টাইন (২)হােম কোয়ারান্টাইন ও (৩)আইসােলেশন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে বাচাঁর প্রথম পদ্বতি বা চেষ্টার অন্তর্ভুক্ত
“কোয়ারান্টাইন”I”Quarantine” শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ ”সঙ্গরােধ বা
পৃথকীকরণ”। অর্থাৎ,কোনাে সংক্রামক রােগের সংক্রমণ রােধ । করার জন্য
কোনাে ব্যক্তিকে আলাদা রাখা।মূলত,নিজেকে বা পরিবারকে রােগের প্রকোপ
থেকে বাচাঁনাের জন্য নিজস্ব প্রচেষ্টা।এর পরবর্তী ধাপে-হােম কোয়ারান্টাইন ও
সর্বশেষ ধাপ আইসােলেশনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সেবাকেন্দ্রে এই রােগের
প্রতিকার করা হয়।
“Quarantine Period” বা ”পৃথকীকরণ-সময়কাল” যত সহজতর মনে হয় ততটাও
সহজতর হয়না।সামাজিক জীব হিসেবে একটা মানুষ তার স্বভাবগত কারণে
এতদিন সবার সাথে যেভাবে মিলেমিশে, আদান-প্রদান’ এর মাধ্যমে বসবাস করে
আসছিল, তার ব্যতিক্রম ঘটে এই কোয়ারান্টাইন সময়কালে।এই সময় মানসিক
মনােবল ও স্থিতিশীলতার সবচেয়ে বেশি প্রয়ােজন হয়।
যেহেতু পুরাে বিশ্ববাসির অন্তর্ভুক্ত,সেহেতু আমিও একটি দেশের নাগরিক তাই
নিজের ও সমগ্র দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে কোয়ারান্টাইনে নিজেকে আবদ্ধ
করা আবশ্যক।নিজেকে ও নিজের পরিবারকে কোয়ারান্টাইনে মানসিক বল ও
স্থিতিশীলতার সাথে প্রতিদিন লড়ে যাচ্ছি এই মারাত্মক ব্যধির সাথে।আমি যেভাবে
কোয়ারান্টাইনের মাঝেও নিজেকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল রেখেছি তা সবার সাথে
ব্যক্ত করার মাধ্যমে অন্যদেরকেও রুখে দাড়াঁনাের আহ্বান জানাচ্ছি।
কোয়ারান্টাইনে নিজেকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখা আবশ্যক।মানসিক
স্থিতিশীলতার জন্য আমি এই কোয়ারান্টাইন সময়ে ঘরে বসে নিত্যপ্রয়ােজনীয়
কাজগুলাে সম্পাদনের পাশাপাশি অন্য যে কাজগুলাে
করেছি তা হলাে
(১)বই পড়াঃঘরে বসে এই সময়ের সঠিক ব্যবহার ও জ্ঞান বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে
বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পালন করে। এক্ষেত্রে ভালাে-ভালাে বই একদিকে যেমন
মনের খােরাক পূরণ করে তেমনি মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য
করে।তাই নিয়মিতভাবে বিভিন্ন রকমের বই পড়ি।
(২)পরিবারের সাথে সময় কাটানােঃপরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে
ইতিবাচক,শিক্ষনীয় কোনাে প্রােগ্রাম,নাটক,ছবি দেখে,একত্রে সময় কাটানাের
মাধ্যমে নিজেকে ও সবাইকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করি।।
(৩)ব্যায়াম বা স্বাস্থ্যের পরিচর্যাঃনিয়মিতভাসে স্বাস্থ্য,মনের স্থিতিশীলতার-প্রশান্তির
জন্য Free Hand Exercise বা খালি হাতে ব্যায়াম করি।
(৪)ধর্মীয় রীতি-নীতির অনুসরণঃনিজ ধর্ম”ইসলাম”মােতাবেক প্রদত্ত নিয়ম-রীতি
অনুসরণ ও বিশ্বাস আনায়ন এর মাধ্যমে মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকার চেষ্টা করে
যাচিছ।
(৫)নিজেকে দুঃচিন্তামুক্ত রাখাঃকরােনা বিষয়ক আপত্তির সংবাদ,ভুল প্রচারিত
সংবাদে ভীত না হয়ে,আগত ভাল সময়ে বিশ্বাস ও ভালাে চিন্তার মাধ্যমে নিজেকে
দুঃচিন্তা মুক্ত রেখে স্থিতিশীল রাখি।
(৬)পরিমিত বিশ্রামঃপরিমিত বিশ্রামের মাধ্যমে আমরা সহজেই নিজেদেরকে
মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখতে পারি,তাই সময় মত ঘুমাতে যাওয়া ও উঠা
অত্যাবশকীয়। | এছাড়া,নিজ পাঠ্যবই পড়া,সামাজিক মাধ্যমে ইতিবাচক
বিষয়সমূহ জানা,আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ফোনে/ভিডিও কলে যােগাযােগ করে
খোঁজ-খবর নেওয়া,গাছের পরিচর্যা সহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেকে
মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখি।
পরিশেষে বলা যায় যে প্রয়ােজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজের নিজের পরিবারের তথা
সমগ্র দেশের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং একজন নাগরিক হিসেবে যার
যার জায়গা থেকে নিজেকে সুস্থ। রাখার দায়িত্ব ও কর্তব্য আমাদের
নিজেদেরই।তাই নিজেকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল রেখে আমাদের। সবারই উচিত
এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জয় নিশ্চিত করা এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য
কল্যাণ বয়ে আনা।
Nafia Alam Nourin
School & College Category
GB007