ইংরেজীতে একটি কথা আছে, “what you think you become” অর্থাৎ আসলে আমরা যা ভাবি তার বাস্তব প্রতিফলনই আমরা আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে দেখতে পাই। যে কোন পরিস্থিতি হোক সেটা যত কঠিন, একমাত্র ইতিবাচক মনোভাবই আমাদের মানসিক শক্তিকে ধরে রাখতে পারে।
রোগ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জার্ম মৃত্যু এসব শব্দগুলো কানে আসলেই মানুষের মনে সৃষ্টি হয় ভয়, আতঙ্ক। ৮ই মার্চ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর যখন সে সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে, খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে ভীতির সৃষ্টি হয়, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং চারপাশের মানুষের জন্য।
ঠিক এভাবে দুশ্চিন্তাই কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর মনে হলো এভাবে আসলে মহামারী মোকাবেলা করা কোনোভাবেই সম্ভব না। আমাকে ভালো রাখতে হবে নিজেকে, আমার পরিবারকে এবং চারপাশের মানুষকে। সেই চিন্তা থেকে গড়ে তুললাম ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মহামারী মোকাবেলা করার প্রস্তুতি।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমি বাদ দিয়ে দিলাম আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হিসেব কিরা, তার পরিবর্তে সুস্থতার হারটাই সবসময় মাথায় রাখতাম। যা মনের ভীতিটা অনেকাংশেই কমিয়ে দেই। নিজেকে ব্যস্ত রাখার তাগিদে শুরু করলাম এলাকার বেশ কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে সময় কাটানো। আমি তাদের পড়াতাম, একসাথে খেলতাম, যে কারণে অল্পদিনেই তাদের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছি, এটা যেন আমার জীবনের আসল উপলব্ধিটাকেই বদলে দিল, অন্য সময় আমার সে সুযোগটা একেবারেই হয়ে উঠেনি। এর পাশাপাশি ইউটিউবের সহায়তায় বিভিন্ন রান্না আর ক্রাপ্টের প্রতি মনোযোগ দিই। অন্যসময় এসব কাজকে কঠিন মনে হলেও নিজের দক্ষতা নিজেকেই মুগ্ধ করে দিলাম। বুঝতে পারলাম, চেষ্টা করলে সবই সম্ভব।
ছবিঃ বাচ্চারা, সাথে হাতের বানানো হেয়ার ব্যান্ড। ডানে ক্রাপট এর কিছু নমুনা।
এছাড়াও বাড়ির আঙিনা ভরে গেছে আগের চেয়ে সুনিপুনভাবে, খালি জায়গাটা পরে নেই, সবজি গাছ আর ফুল গাছে ভরে গেছে, কারণ শুরু করে দিয়েছি আগের চেয়েও বেশি যত্ন নেওয়া।
এই দীর্ঘ সময় বাড়িতে অবস্থান করাটা যে শিক্ষাটা দিয়ে গেল, তা দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে অবস্থান করার কারণে অজানাই রয়ে গেছিল। এটা যেন পরম পাওয়া।
পাশাপাশি গ্রামের মানুষের জন্য কিছু লরার সূযোগটাও এসময়েই সম্ভব হলো, একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য হওয়ায় তাদের সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের কাছে, যা অন্য সময়ে সময় সল্পতার কারণে করা হয়নি।
ছবিঃ এই সময়েই বেড়ে ওঠা ফুল এবং সব্জি। ডানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তার খন্ডচিত্র (৩১-০৬-২০২০ইং)
এছাড়াও যে জিনিসটাকে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম বলে মনে হলো তা হচ্ছে প্রকৃতি। বিকেলবেলা প্রকৃতির চিরায়ত নিয়মটা বেশ ভালোভাবেই খেয়াল করা হতো। পাখিরা ঠিকই গাইছে, ন্দী ঠিকই বহমান রয়েছে, ফুল ঠিকই সুভাস ছড়াচ্ছে। যেখানে কোনো ভয় নেই, কোনো আতঙ্ক নেই। যা থেকে এটাই শিক্ষা নিতাম যে প্রকৃতির সবকিছু থেমে যাইনি শুধুমাত্র মানুষের জন্য খানিকটা দুঃসময় নেমে এসেছে, প্রকৃতির অন্যান্য জীবের মতো মানুষও একদিন ফিরে পাবে মুক্তভাবে বেটে ওঠার স্বপ্ন, আর নিজেকে সবসময় বলতাম, “Be positive, be happy.”
ঠিক এভাবেই প্রকৃতির সব ইতিবাচক চিন্তায় দীর্ঘদিনের অস্বস্তিকর অবস্থাকে আশীর্বাদ রুপে দেখতে সক্ষম হই।
মুরশিদা আক্তার
University Category
GB009