সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। এই প্রবাদ বাক্যটির সর্বোচ্চ ব্যবহারিক প্রয়োগ বোধ হয় এখন দেখতে পাচ্ছি। দেশজুড়ে লকডাউন এবং সকলে আমরা ঘরবন্দি। এক অজানা যুদ্ধে আমরা নেমেছি। আমরা জানি এই লড়াই সহজ হবে না। তবুও দমে আমরা যাব না। স্ব স্ব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে শত্রুর সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি আর করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ এমনই একটি কার্যকর পদক্ষেপ৷ দেখতে দেখতে প্রায় সাত মাস কাটিয়ে দিয়েছি। আমরা ঘরে বসে থাকলেও সময় তো আর আমাদের মতো বসে থাকে নি। তবে এই কোয়ানেন্টাইনে আমরা মানসিকভাবে নিজেদের কতটুকু স্থিতিশীল রাখতে পারছি এটা যেন এই যুদ্ধের কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই নতুন স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় খাপ খাওয়াতে বেশ কিছু চড়াই উতরাই পার হতে হয়েছে। আমার নিজের কথাই বলি। আমি ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন শিক্ষার্থী। এ বছরের ৫ মার্চ শেষ হলো এসএসসি পরীক্ষা। বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম।অনেক পরিকল্পনা ছিল। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাবার ইচ্ছা ছিল৷ কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিল এবং সর্বত্র লকডাউন ঘোষণা করা হল৷ হুট করে যেন স্থবির হয়ে গেল তথাকথিত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।কাজেই সকল পরিকল্পনা বাতিল হলো এবং বাড়িতেই ছুটি কাটানো শুরু করলাম। প্রথমে অবশ্য মন খারাপ হয়েছিল কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম।সে সময় উপলব্ধি করতে পারলাম শারীরিক সুস্থতার জন্য তো আমরা বাসায় থাকছি, তবে একই সাথে আমার এবং আমার পরিবারের মানসিক সুস্থতাও বজায় রাখা প্রয়োজন। ভেবে দেখলাম এই স্থায়িত্বকাল জুড়ে নিজের মনকে ভালো রাখতে তেমন কোন কঠিন কাজ করার প্রয়োজন নেই। শুধু দরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। কাজেই সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমার নিজের আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা শুরু করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এখনই মনে হয়েছে৷ স্কুল থেকেই বিতর্ক করতাম এবং এজন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান সংগ্রহ করতে হতো। কাজেই এই অফুরন্ত সময়ে সমসাময়িক ও সামাজিক নানা সমস্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিলাম। তাছাড়াও বই পড়ার শখ তো আছেই, বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বইগুলো। এই কোয়ারেন্টাইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাকে সবচেয়ে বেশী সাহস জুগিয়েছে এবং মানসিকভাবে মজবুত করেছে৷ ছোটবেলা থেকে গান শিখি, তবে মাঝে পড়ালেখার চাপে গান চর্চা হয়ে উঠছিলো না৷ এই হোম কোয়ারেন্টাইনে গলা ছেড়ে আবার বসে পড়লাম সঙ্গীত চর্চায়৷ পাশাপাশি করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সকল খবরাখবর জানতে চোখ রাখতাম “WHO” (World Health Organisation) এর ফেসবুক পেইজ এ, যাতে অযথা উদ্বিগ্ন না হতে হয়৷ ও হ্যাঁ, এই নতুন যাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী ‘প্রযুক্তি’ তাকে তো ভুলে গেলে চলবে না। প্রযুক্তির মাধ্যমেই তো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে থেকেও নিজেকে তাদের মাঝে আছি বলেই মনে হয়। আর অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ তো রয়েছেই। তবে আমার হোম কোয়ারেন্টাইনের সবচেয়ে বড়ো অর্জন হলো ‘পারিবারিক সঙ্গ’। প্রতি বেলায় সবাই একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা দেওয়া বাবা-মা এর সাথে মিলে একসাথে বাসার কাজকর্ম করা, ছোট ভাইয়ের সাথে গল্পগুজব, দুষ্টুমি করা; সত্যিই এই মুহূর্তগুলো অমূল্য। এভাবেই পারিবারিক সঙ্গ এবং নিজের মনের খোরাকগুলো চর্চার মাধ্যমে মানসিকভাবে নিজেকে স্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টায় সময়ের এই স্রোতটি পার করছি। পরিশেষে বলতে চাই, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে একটি সুস্থ পৃথিবীর আগন্তুক ভোরের আশায় আমাদের সকলকে এই মহামারী পরিস্থিতিতে উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে হবে ।
Tasnia Hai Esha
School & College Student
GB077