বুলিং কি? এর প্রভাব এবং আমাদের করনীয়।
বুলিং খুবই পরিচিত একটি শব্দ।নানাভাবে মৌখিক বুলিংয়ের শিকার হয়ে ব্যক্তি মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার জন্য ব্যক্তি তখন নিজেকেই দায়ী করে। ফলে কেউ কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে আত্মহননের পথও বেছে নেয়। শুধু তরুণ প্রজন্ম বা প্রাপ্ত বয়স্কই নয় একটি শিশুর সহজাত মানসিক বিকাশেও বুলিং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করতে বুলিং-মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
ইংরেজি ভাষায় ‘বুলিং’ বলতে কাউকে মানসিকভাবে আঘাত করার উদ্দেশ্যে তাকে বারবার বিভিন্নভাবে হয়রানি করাকেই বোঝায়। বুলিংয়ের ক্ষেত্রে সব সময়ই কোনো না কোনো প্রত্যক্ষদর্শী থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে অপদস্থ করতে হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করাই বুলিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। বুলিং নানাভাবে হতে পারে। এর মধ্যে শারীরিক, মৌখিক, মানসিক, আবেগীয়, সাইবার, জাতিগত, যৌন হয়রানিমূলক নানা ধরনের বুলিংয়ের সঙ্গে আমরা পরিচিত।
অনেক ধরনের বুলিং রয়েছে যা শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা একইভাবে অনুভব করা যেতে পারে। বুলিং এর ধরণগুলো নিম্নে বর্ণিতঃ
শারীরিকঃ দৈহিক উৎপীড়নের মধ্যে রয়েছে আঘাত করা, লাথি মারা, চিমটি দেয়া এবং ধাক্কা দেওয়া বা সম্পত্তির ক্ষতি করা। শারীরিকভাবে বুলিং করার ফলে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের ক্ষতিই হতে পারে
মৌখিকঃ মৌখিক বুলিংয়ের মধ্যে রয়েছে নাম ডাকা, অপমান, টিজিং, ভয় দেখানো, সমকামী বা বর্ণবাদী মন্তব্য, মৌখিক গালিগালাজ। যদিও মৌখিক উৎপীড়ন খুবই হালকা ভাবে দেখা হয় কিন্তু এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
সামাজিকঃ সামাজিক উৎপীড়ন কখনও কখনও শনাক্ত করে কঠিন হয়, এটা কারও সামাজিক খ্যাতি বা অবমাননার জন্য করা হয়। যেমনঃ
• মিথ্যা এবং গুজব ছড়ানো।
• নেতিবাচক মুখের বা শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, ভয়ংকর বা অবজ্ঞাপূর্ণ চেহারা।
• বিব্রত ও অপমানিত করার জন্য বাজেভাবে রসিকতা করা ও অনুকরণ করা।
• সামাজিকভাবে কাউকে বাদ দিতে অন্যকে উৎসাহিত করা।
• কারো সামাজিক খ্যাতি বা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করা।
সাইবারঃ সাইবার বুলিং সেন্টারের মতে, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে ক্ষতি করা। নারী ও শিশু-কিশোরেরা এতে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে বিভিন্ন জরিপ বলছে। ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত ছবি–ভিডিও ছড়িয়ে, ফেসবুক আইডি হ্যাক করে হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়, ছবি বা ভিডিও এডিট করে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, সুপার ইম্পোজ ছবি, পর্নোগ্রাফি, ছবি দিয়ে আপত্তিকর কনটেন্ট বা ফেক আইডি তৈরি, ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেওয়া, হয়রানিমূলক এসএমএস, মেইল বা লিংক পাঠানোসহ বিভিন্ন উপায়ে এ হয়রানি করা হচ্ছে।
বুলিং করার কারণ
অন্যের মনোযোগ পাওয়ার জন্য বুলি করা বুলিং এর একটা অন্যতম কারণ। যখন একটা ছেলে আরেকটা মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় তখন ছেলেটা মেয়েটাকে নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা করে তার মনোযোগ পাওয়ার জন্য। ❝আবার দেখা যায় নিজেকে “মাচো ম্যান” প্রমাণ করতেও অনেক বুলি করে থাকে। যে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরা বুলিংয়ের শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যকে বুলি করার হার বেশি দেখা যায়। এটা করে তারা হিসাব-নিকাশ মিলাতে চায়।❞-বাংলা ম্যাধ্যমের একজন শিক্ষক।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, শারীরিক গঠন যেম্ন-লম্বা, খাটো, চশমা পরিহিত ব্যক্তি, স্থুলকায় ব্যক্তি বা ওজন কম, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বুলিং এর শিকার বেশি হয়।
বুলিং এর পরিণতি
বুলিং শিকার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনুপস্থিতির হার অনেক বেশি দেখা যায়। এছাড়াও তাদের মধ্যে হতাশ, রাগ, ক্ষোভ, উদ্বিগ্নতা এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়। আবার অনেকে একেবারে নীরব হয়ে যান এবং কোনো কাজের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেন।
বুলিং এই অন্তর্নিহিত বার্তা বহন করে যে আগ্রাসন এবং সহিংসতাই যেকোনো সমস্যার সমাধান করে দেয়। কিন্তু আসলে তা ভুল ধারণা। সহযোগিতা এবং পার্থক্যের শান্তিপূর্ণ সমাধান একটি ক্রমবর্ধমান আন্তঃসমগ্যুক্ত বিশ্বকে সমর্থন করে। আর বুলিং শুধুমাত্র যারা এর শিকার তাদেরকেই ক্ষতি করে না, যারা বুলি করে তাদেরও ক্ষতি করে। বেশিরভাগ বুলিদের জীবনের গতিপথ হয় নিম্নমুখী কারণ তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখতে বাধাপ্রদান করে।
বুলিং এর শিকার ব্যক্তির করণীয়
• আস্থাভাজন কারো কাছে শেয়ার করা।
• নিজের ভালো দিকগুলো সসম্পর্কে অবগত থাকা এবং দূর্বল দিকগুলো নিয়ে সচেতন থাকা। দূর্বল দিকগুলো স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা কারণ প্রত্যেকেরই দূর্বলদিক আছে।
• সাপোর্ট সিস্টেম যেমনঃ পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা এবং তাদের সহযোগিতা নেয়া।
• সুযোগ থাকলে যে বুলি করছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
• অসহনীয় মনে হলে এবং নিজের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মনে হলে মনোবিদের সহায়তা নেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মেন্টাল হেলথ এসোসিয়েট
GRACE