Eating Disorder- বাংলায় যা আহার ব্যাধি নামে পরিচিত, একটি জটিল আচরণগত সমস্যার নাম যা কোনো নির্দিষ্ট অবস্থাকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয় না। এটি মূলত মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সাথে সম্পর্কিত ।এমন একটি আচরণগত দশা যা মানুষের খাদ্যাভ্যাসের কিছু অস্বাভাবিক আচরণগত pattern বা নমুনা কে নির্দেশ করে। মূলত ৩ ধরণের eating disorder আমরা পেয়ে থাকি এর ভুক্তভোগীদের মধ্যে। সেগুলো হলো:
1. Anorexia Nervosa
2. Bulimia Nervosa ও
3. Binge Eating Disorder
উপরের গুলো মূল পর্যায়ের ডিজঅর্ডার হলেও কিছু অপ্রধান ধরণও আছে যা পৃথিবীব্যাপী বেশ পরিচিত।
যেমন:
1.Avoidant/Restrictive Food Intake,
2.Rumination Disorder,
3.Pica
4. Night eating disorder
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও এই অপ্রধান ডিজঅর্ডারগুলো নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। অর্থাৎ, আমাদের আশেপাশেই এমন ঘটনা এখন ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তাই সময় এখনই সচেতনতা বাড়ানোর!
Eating Disorder খুব গুরুতর পর্যায়ে চলে যেতে পারে যা একসময় শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে থাকে। আচরনগত এই সমস্যাটি নির্ণয় করা একটু কঠিন। সমস্যাটি বুঝে উঠতে অনেক সময় লেগে যায় যা এই ডিজঅর্ডারটিকে একটি সংকটজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে আর তখন এটা সারিয়ে তুলতেও বেশ বেগ পেতে হয়। তাই সবার আগে জেনে নিতে হবে কোন ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ কি কি….
Anorexia Nervosa: অল্প কথায় Anorexia, যা ভুক্তভোগীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো
শরীরের ওজন কম থাকা,
ওজন বাড়ার তীব্র ভয় কাজ করা এবং
ওজন ও শারীরিক গঠন নিয়ে বিকৃত মনোভাব থাকা।
এই আচরণগত ডিজঅর্ডার থাকার ফলে, ব্যক্তি ক্যালোরি গ্রহণের উপর অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করে ফেলে অথবা অন্য কোনো বিকল্পের আশ্রয় নেয় ক্যালোরি গ্রহণের প্রভাব প্রশমনের জন্যে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়াম, Laxative( যা পেট খালি করার এক ধরণের ওষুধ) এর ব্যবহার অথবা ডায়েট পিল এমনকি খাওয়ার পরে বমি করে খাবার বের করে দেওয়া। এই ডিজঅর্ডারটি থাকার কারণে মানুষ দিন দিন অনাহার বা পরিমিত খাবার নেওয়া থেকে বিরত থাকে কম ওজন থাকার পরেও। অল্প কথায় বলতে গেলে এই ডিজঅর্ডার থাকা মানুষগুলো তাদের শারীরিক ফিটনেস বা গঠন নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন থাকেন। শারিরীক সমালোচনা তারা মোটেও পছন্দ করেন না।
Bulimia Nervosa: একে শুধু Bulimia ও বলা যায় আর এটিও এমন একটি গুরুতর আচরণগত সমস্যা যা একটি মানুষের জীবন-ঝুঁকির কারণও হতে পারে। এই ডিসঅর্ডার থাকলে খাওয়ার উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মানে সারাদিন একজন তার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকেন যেটা পরে আবার অতিরিক্ত খাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় আর পরিশেষে জোর করে সেই খাবার বেরও করে ফেলেন। অপরাধবোধ, লজ্জা আর ওজন বাড়ার অতিরিক্ত ভয় থেকে ভুক্তভোগী এমন টা করে থাকেন। জোর করে বমি করে খাবার বের করে দেওয়া, অতিরিক্ত ব্যায়াম অথবা ওষুধসহ অন্য কোনো উপায়ে ক্যালোরি ইনটেক কমানোর চেষ্টা করেন। এই মানুষগুলো নিজেদের কঠোরভাবে বিচার করেন অর্থাৎ তারা অতিরিক্ত Judgemental। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর ওজন স্বাভাবিক আবার বেশী ও হতে পারে।
Binge Eating Disorder: এই আচরণের মানুষগুলো প্রতিদিন অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করেন আর তাদের খাওয়ার উপরে নিজেদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তারা তাড়াতাড়ি খাবার খায় অথবা ইচ্ছার অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলে ক্ষুধার্ত না থাকা সত্ত্বেও। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে অস্বস্তি অনুভূত হলেও উক্ত ব্যক্তি খাওয়া থামায় না। এই আচরণের দরুণ অপরাধবোধ, অস্বস্তি, লজ্জাবোধ কাজ করে কিন্তু জোর করে খাবার বের করে দেওয়ার চেষ্টা বা ব্যায়াম করার প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যায় না। অনেকেই বিব্রতবোধ করার কারণে একা একা অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার খান। ভুক্তভোগীর ওজন স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক বা স্থুলাকায় ও হতে পারে।
এবার আসা যাক অপ্রধান ডিসঅর্ডারগুলোর আলোচনায় । প্রথমেই বলে দেওয়া এই ডিসঅর্ডারগুলো প্রধান পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু তারপরও খাদ্যাভ্যাসের অস্বাভাবিক আচরণের এই ধরণগুলি বেড়েই চলছে আশেপাশে। তাই অপ্রধান বলে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই আর। জেনে নেয়া যাক তাদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত করে।
Avoidant/Restrictive Food intake: এই ডিজঅর্ডার থাকার কারণে ব্যক্তি নিজের প্রতিদিনকার পুষ্টিচাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয় খাবার রুচির অভাবে বা খাবার নিয়ে খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্য। সব খাবার তাদের পছন্দ না। ভুক্তভোগী খাবারের প্রতি রুচি অনুভব করে না বা স্বাদ পায় না। কোনো খাবারের গন্ধ, রঙ বা আকার আকৃতির পছন্দ না হওয়াতে তারা সেই নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি অনীহা নিয়ে থাকেন। সেগুলো তারা avoid অর্থাৎ এড়িয়ে চলেন। একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন ছোটদের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তারা খাবার নিয়ে বড্ড খুঁতখুঁতে। এই স্বভাবটিই বড়দের মধ্যে আর একটু জটিল রূপ নিয়ে হাজির হয় যাকে আমরা বলছি eating disorder। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে avoidant food intake।
Rumination Disorder: একটি নতুন ধরণের স্বীকৃত ডিজঅর্ডার যা থাকলে ভুক্তভোগীরা তাদের চাবানো অথবা গিলে ফেলা খাবার আবার মুখের মধ্যে আনে আর তা হয় আবার গিলে ফেলে অথবা মুখ থেকে ফেলে দেয়। অনিচ্ছাকৃতভাবেই ব্যাক্তি তা করে থাকেন এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না । এটি মূলত psychological disorder অর্থাৎ মনস্তাত্বিক সমস্যা নির্দেশ করে। শারিরীক বা হজমজনিত কোনো সমস্যার সাথে সম্পর্কিত নয়। Behavioural therapy এই ডিসঅর্ডার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সহায়ক।
Pica :এমন একটি ডিজঅর্ডার যা থাকলে ব্যক্তি এমন ধরণের খাবার খাওয়া শুরু করে যা আদৌ কোনো খাবারই নয়। যেমন: চক, চুল, কাপড়, পাথর, সাবান ইত্যাদি। এই ডিসঅর্ডার খুবই জটিল আকার ধারণ করতে পারে মানুষের মধ্যে। যেমন: চীনের এক ১৫ বছরর কিশোরের পেটে ২০০ টি লোহার পেরেক পাওয়া যায়! এছাড়াও পৃথিবীজুড়ে এই রোগের অদ্ভুত সব নজিরের দেখা মেলে যা লোমহর্ষকও বটে। নানান কারণে এই ডিসঅর্ডার দেখা দিতে পারে। মানসিক এমনকি শারিরীক কিছু অপুষ্টি (মিনারেলের অভাব) এই রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। সঠিক কারণ খুঁজে এই রোগের নিরাময় সম্ভব।
Night Eating Disorder: নামেই বুঝা যাচ্ছে এই ডিসঅর্ডার ব্যাক্তির রাতে খাওয়ার প্রবনতাকে নির্দেশ করছে। রাতে ঘুমের মাঝে উঠে বারবার খেতে যাওয়ার প্রবণতা এই অভ্যাসকে ডিসঅর্ডার এর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। আর লম্বা সময় ধরে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ বা অসময়ের খাবার গ্রহণ অনেকের মধ্যেই শারিরীক সমস্যা যেমন: বদহজম, অতিরিক্ত মেদ ইত্যাদি তৈরী করে দিতে পারে।
Eating Disorder এর কারণ কী ?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন নানান কারণ ও বৈশিষ্ট্য এই ডিজঅর্ডারটির জন্য দায়ী হতে পারে। জিনগত কারণ, ব্যাক্তিত্বজনক কিছু বৈশিষ্ট্য, ব্রেইন এর গঠনগত ভিন্নতা, কোনো এলাকার খাওয়ার অভ্যাস বা সংস্কৃতি সহ আরো অনেক কিছু এর পেছনে কাজ করে থাকে।
Eating Disorder এর প্রভাবগুলো কী কী ?
জটিল এবং গুরুতর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা।
হতাশা উদ্বেগ কাজ করা।
আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা অথবা কাজ করা।
শারীরিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি হওয়া।
সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা তৈরী হওয়া।
মৃত্যু
ট্রিটমেন্ট কী এই ডিসঅর্ডারের ?
সাইকোথেরাপি
ক্লিনিকাল পর্যবেক্ষণ ও যত্ন।
পুষ্টিবিষয়ক কাউন্সেলিং।
ওষুধ সেবন।
উল্লেখ্য যে উপরোক্ত পয়েন্টগুলির প্রয়োজনীয়তা একজন ডক্টর ঠিক করবেন ভুক্তভোগীর আচরণগত ডিসঅর্ডারের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে সবধরণের ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন নাও পড়তে পারে কিংবা এর বাইরে আরো কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
Eating Disorder পৃথিবীব্যাপী অন্তত ৯% মানুষকে প্রভাবিত করে। আন্তর্জাতিকভাবে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে এই ডিসঅর্ডারটি বিদ্যমান ( National Eating Disorders Association )। দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলছে। মানুষের মধ্যে মানসিক সমস্যার আধিক্যের সাথে পাল্লা দিয়ে এই আচরণগত সমস্যা আরো নানান রূপ নিয়ে হাজির হচ্ছে। আসলে এই সমস্যাটি আমদের মাঝে থাকলেও আমরা এটা নিয়ে সচেতন নই সেভাবে, যার কারণে আড়ালে অগোচরেই থেকে যায় এই Behavioural disorder। Eating Disorder মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে কাউকে। তাই এই ডিজঅর্ডারটির ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে যাতে সঠিক সময় এর নিরাময় করা সম্ভব ও সহজসাধ্য হয়।
সূত্র: Mayo Clinic,
National institute of mental health,
Healthline,
American Psychiatric Association।
Written by: Sadia Tasnim,
Volunteer at HOV, DU chapter.